অল্প সময়ের এই শীতে শুষ্ক বাতাসের তীব্রতা অনেকটা বেড়ে যায়। হিমেল এ বাতাস মানুষের শরীরের বেশি প্রভাব ফেলে ত্বকে। খসখসে হয়ে ওঠে ত্বক। ঠোঁট, হাত ও পায়ের গোড়ালিও ফেটে যায় অনেকের। তাই এ সময় ত্বকের বাড়তি যত্নের প্রয়োজন হয়। আমরা আজকের পোস্টে বেশ কিছু টিপস সম্পর্কে জানব, যার দ্বারা এই শীতে আমরা সঠিক ভাবে ত্বকের যন্ত নিতে পারি।
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক প্রাকৃতিক কিছু টিপসঃ
জলপাই তেল বা অলিভ অয়েলঃ
সব ধরনের ত্বকের যত্নেই জলপাইয়ের তেল খুবই উপকারী। অলিভ অয়েল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে পা থেকে গলা পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। এ ছাড়া এর সঙ্গে মধু ও চিনি মিশিয়ে ঘন ক্রিমের মতো প্যাক তৈরি করে স্ক্রাবের কাজ করা যায়। এই তেল ব্যবহারের ফলে ত্বকের মৃত কোষ উঠে যায়। তাছাড়া কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট ফাটা বন্ধ হয়ে যায়।
মধুঃ
মধু যেমন স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী ঠিক তেমনি রূপচর্যার কাজে মধু অপরিহার্য। মধু সব সময় বিভিন্ন ভাবেই ব্যবহার করা য়ায়। তবে শীতকালে এর ব্যবহার আরও বেড়ে যায়। অন্য যেকোনো প্যাকের সঙ্গে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করা যায় মধু। মধু নিমিষেই ত্বকের শুষ্কতা দূর করে। ত্বকের যেকোনো সমস্যায় মধু ওষুধের কাজ মতো করে।
পাকা কলাঃ
কলা একটি বারোমাসি ফল, এর অনেক পুষ্টিগুন রয়েছে। ত্বক মসৃণ ও উজ্বল করতে পাকা কলার জুড়ি মেলা ভার। বেসন, দুধ ও কলা ব্লেন্ড করে মুখে, গলায়, হাতে ও পায়ে লাগাতে পারেন। ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান। এটি নিয়মিত ব্যবহারের ফলে ত্বক পাবে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা, হয়ে উঠবে নরম ও কোমল।
নারিকেল তেলঃ
মুখ ও শরীরের ত্বকের পাশাপাশি গোড়ালি, হাঁটু, কনুইয়েরও বিশেষ খেয়াল রাখা প্রয়োজন, বিশেষ করে শীতকালে। না হলে এ জায়গাগুলো রুক্ষ ও কালো হয়ে যায়, অনেকটা ফেটেও যায়। এর যত্নে ব্যবহার করতে পারেন নারিকেল তেল। এ জন্য প্রথমে ত্বক ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। এরপর তেল আলতো করে ওই জায়গাগুলোতে লাগিয়ে নিন। রাতের বেলা এ কাজ করাই ভালো।
কমলালেবুঃ
কমলালেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি ত্বকের বলিরেখা রোধ করে। কমলালেবুর খোসা, সরবাটা, ময়দা বা বেসনের প্রলেপের ব্যবহার রূপটান হিসেবে বহুদিন প্রচলিত। এই শীতে যত কমলালেবু খাবেন, তার খোসা না ফেলে, রোদে শুকিয়ে সংগ্রহ করে রেখে দিন। পরে গুঁড়া করে ব্যবহার করতে পারবেন।
গোলাপজল ও গ্লিসারিনঃ
শীতকালে গোলাপজল ও গ্লিসারিন একটি বড় ভূমিকা রাখে ত্বকের যত্নে। এ দুটি একসঙ্গে মিশিয়ে লাগালে ত্বক সুন্দর থাকে, থাকে মসৃণ। গ্লিসারিন যেকোনো ত্বকে খুব দ্রুততার সঙ্গে কাজ করে তেমনি ত্বক রাখে মোলায়েম ও প্রাণবন্ত। ত্বকে থাকা নানা সমস্যাও দূর করে। মিশ্রণটি রাতে ঘুমানোর আগে ব্যবহার করাই ভালো।
তবে, এসবের পরও মূল কথা হলো, শরীর ভেতর থেকে আর্দ্র না হলে এর ছাপ পড়বে ত্বকের ওপর। তাই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে। দিনে কমপক্ষে আট থেকে দশ গ্লাস পানি খাওয়া আবশ্যক। ডাবের পানি, ফলের রসও পান করতে পারেন।
অন্যান্য কিছু বিষয় জেনে নিনঃ
ত্বকে ময়েশ্চারাইজঃ
শীতে ত্বকের যত্নের শুরুতে একটি ভালো ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন। বাজার থেকে বাদাম তেল বা এভাকাডোসমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার কিনুন। এগুলো ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। যতবার ত্বক শুষ্ক মনে হবে ততবার ব্যবহার করুন।
সানস্ক্রিন ব্যবহারঃ
শীত আসছে বলে ভাববেন না যে, সানস্ক্রিন ব্যবহার করার প্রয়োজনীতা কমে গেছে। শীতকালেও বাইরে বের হওয়ার ৩০ মিনিট আগে এসপিএফ ১৫-৩০ সম্পন্ন সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
আর্দ্রতা বজায় রাখুনঃ
শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা বজায়ে মাঝে মাঝে মুখে পানির ঝাপটা দিন। সহজে ত্বক শুষ্ক হবে না। গোসলের পর এবং প্রতিবার মুখ ধোয়ার পর ভেজা অবস্থায় ময়েশ্চারাইজার বা লোশন ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে।
অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার থেকে বিরত থাকুনঃ
গোসলের সময় আরাম অনুভব হলেও অতিরিক্ত গরম পানি দিয়ে মুখ, মাথা ধোয়া থেকে বিরত থাকবেন। অতিরিক্ত গরম পানি মুখের ত্বকের ফলিকলগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে যা ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। গোসলের সময় পানিতে কয়েক ফোঁটা বাদাম তেল দিয়ে নিলে তা ত্বককে আর্দ্র এবং মসৃণ করতে সহায়তা করে।
ঠোঁটের পরিচর্যাঃ
কখনোই জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজানো উচিত নয়। কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালে ঠোঁট কখনোই ফেটে যাবে না।
মেকআপ করার সময়ঃ
মেকআপ করার সময় লিক্যুইড ফাউন্ডেশন ব্যবহার করবেন না। শীতকালে ক্রিম ফাউন্ডেশন ব্যবহার করুন।
চুলের যত্নঃ
শীতকালে কখনোই ভেজা চুলে বাইরে বের হওয়া উচিত নয়। এতে করে চুলের আর্দ্রতা নষ্ট হয় এবং চুল ভেঙে যায়। তাছাড়া চুল এবং মাথার তালুর আর্দ্রতা ধরে রাখতে হ্যাট (টুপি) পরুন। তবে হ্যাটটি যাতে বেশি টাইট না হয় সে দিকে খেয়াল রাখবেন।
সুতি কাপড় পরুনঃ
যাঁদের অ্যালার্জিজনিত সমস্যা আছে তারা ভেতরে সুতি অথবা ফ্লানেল কাপড়ের জামা পড়ে তার ওপর উলের কাপড় পরতে পারেন। যেসব খাবারে অ্যালার্জি বা একজিমা বেড়ে যায়, শীতে সেসব খাবার বাদ দিতে হবে।
এসব নিয়ম মেনে চললে দেখবেন এই শীতের সময়টা আপনার ত্বক ও শরীরের জন্য অনেক উপভোগ্য হয়ে উঠবে।
সংগৃহীত
Leave a Reply