মানুষ কীভাবে সুস্থ থাকতে পারে এবং কোন উপায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, সেটি নিয়ে নানামুখী গবেষণা হয়েছে বিশ্বজুড়ে। ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বেশি আমাদের সকলেরই আছে। বয়সের সাথে সাথে যা কমতে থাকে। বয়স বৃদ্ধির ফলে আমাদের দেহে পুষ্টির অভাব দেখা দেয়। যার কারণে বয়স্ক ব্যক্তিদের রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায় বেশি। তবে শিশু ও কম বয়সী মানুষদেরও মাঝেমাঝে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কম থাকে। ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই জরুরি।
রোগ প্রতিরোধ করার জন্য পর্যাপ্ত শক্তি না থাকলে যে কোন রোগেই জর্জরিত হয়ে যেতে পারেন আপনি। ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণও তখন বেশি হয়। ইমিউন সিস্টেমে ঘাটতি দেখা দিলে সারা বছরই রোগে ভুগতে হয় মানুষদের। পর্যাপ্ত শক্তি না থাকার ফলে দৈনন্দিন কাজেও ব্যাঘাত ঘটতে পারে। নানান কারণে আমাদের দেহের শক্তি বা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে যেতে পারে। তখন দেহে নানান ঘাটতি দেখা দেয়। তবে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে ও কায়িক পরিশ্রম করলে এই ঘাটতি পূরণ হতে পারে।
চিকিৎসক এবং পুষ্টিবিজ্ঞানীরা বলছেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী না হলে অল্প অসুস্থতাতেও মানুষ খুব সহজে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং রোগের আক্রমণও জোরালো হয়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কিছু উপায় জেনে নিনঃ
শরীরকে সুস্থ ও ফিট রাখার চাবিকাঠি হিসেবে কাজ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমিউনিটি। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অনেক রকম পন্থা অবলম্বন করা হয়। কিন্তু কিছু ভালো অভ্যাস তৈরি করলেই সেটি সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করতে কিছু অভ্যাস মেনে চলুন।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহনঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে প্রথমেই আপনার খাদ্যভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। প্রচুর শাক-সবজি ও ফলমূল খান। ফলের রসের পরিবর্তে গোটা ফল চিবিয়ে খেলে বেশি উপকার পাবেন । এতে পুষ্টি সাথে ফাইবারও পাওয়া যাবে। দুগ্ধজাত খাবার যেমন – যেমন- দই, ঘোল, ছানা ইত্যাদি। এই খাবারগুলো পাকস্থলীতে উপকারী জীবাণুকে বাঁচিয়ে রাখে। ভিটামিন ডি এর জন্য দিনের কিছুটা সময় শরীরে রোদ লাগাতে হবে। এটা খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনাচরণের সাথে সম্পৃক্ত। তাছাড়া, মধুতে রয়েছে জীবাণু ধ্বংসকারী উপাদান যেমন- হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, নাইট্রিক অক্সাইড যা আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বেশ উপকারী ।
“পুষ্টিকর খাবার তালিকা ও এর প্রয়োজনীয়তা” – এই পোস্টটি দেখতে পারেন।
ফাস্টফুড, তেল-চর্বি ও মসলা জাতীয় খাবার যথাসম্ভব পরিহার করুন। আপনার শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখুন।
পানিঃ
পানি আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খবুই উপকারী। প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করার অভ্যাস করতে হবে। প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির সুস্থ থাকতে হলে দৈনিক গড়ে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করা উচিত। এটি শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে এবং শরীরে তরলের ভারসাম্যতা বজায় রাখে।
জেনে নিন “শরীরে পানির প্রয়োজনীতা” সম্পর্কে।
পর্যাপ্ত ঘুমঃ
অগোছালো জীবনযাত্রা স্বাস্থ্যের ওপর অনেক ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। ঘুম না হওয়া বা কম ঘুম সে ক্ষতি আরও বাড়ায়। চিকিৎসকদের মতে, একজন মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করতে হবে। এ অভ্যাসটি ঘুমের সময় নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করে।
শরীরচর্চা/ব্যায়ামঃ
শরীরকে সুস্থ রাখতে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শরীরচর্চা একটি অপরিহার্য বিষয়। প্রতিদিন নিয়ম মেনে শরীরচর্চা করার অভ্যাস করা দরকার। জিমে গিয়ে না করতে পারলে বাসায় শরীরচর্চা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে যোগ-ব্যায়ামও ভালো কাজ করে। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা উচিত। ঘরে থেকে আপনি যা করতে পারেন হাঁটাহাটি , সাইক্লিং , ইয়োগা , ওয়েট শিফ্টিং , সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা ইত্যাদি আপনার শরীর চর্চার উপায় হতে পারে। প্রতিদিন ৪০-৪৫ মিনিট হাঁটার চেষ্টা করুন। এতেও আপনার রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। কেননা রোজকার এই সামান্য ব্যায়াম আপনার দেহের রক্ত চলাচল করার ক্ষমতাকে সচল রাখে। যা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বেশ সহায়ক।
ধূমপান ও মদ্যপান থেকে বিরত থাকাঃ
ধূমপান ও মদ্যপান শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে এবং রোগব্যাধি সংক্রমণের আশঙ্কাকে অনেকগুণ বাড়িয়ে তোলে। এগুলো স্বাস্থ্যকে খারাপ করে দেয় এবং মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
আবার, অতিরিক্ত চা, কফি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এর পরিবর্তিতে আপনি গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করে ফেলতে পারেন। গ্রিন টির উপকারীতা জানতে ক্লিক করুন এখানে।
কোমল পানিয় খাবেন না। জেনে নিন “কোমল পানীয় খেলে শরীরের কি ক্ষতি হয়?”
মানসিক চাপমুক্ত থাকুনঃ
অতিরিক্ত মানসিক চাপ আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই মানসিক চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। যে বিষয়গুলো আপনাকে মানসিক চাপে ফেলছে, সেগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করুন। পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ভালো সময় কাটান, গান শুনুন, মুভি দেখুন, বই পড়ুন, বা নতুন কিছু শিখতে মনোনিবেশ করুন। মেডিটেশন করতে পারেন, এটি খুব ভালো উপায় আপনার মনকে শান্ত রাখার। তাছাড়া, বাড়িতে পোষা প্রাণী মন খুশি রাখতে ভূমিকা রাখে। মানসিক চাপ থেকেই মুক্তি পাওয়ার পাশাপাশি যারা একা বসবাস করেন, তাদের ভালো সঙ্গী হিসেবে থাকতে পারে পোষা প্রাণী।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন নিজেকেঃ
বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে নিজের এবং আশপাশের পরিবেশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। নির্দিষ্ট সময় পর পর হাত সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ব্যবহার্য জিনিপত্র জীবাণুনাশক পদার্থ দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। দরজার হাতল, সুইচ, লিফ্টের বাটন জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার রাখুন ও মাস্ক ব্যবহার করুন।
সংগৃহীত
Leave a Reply