কিশমিশ বা (Raisins) নিয়ে বিস্তারিত

benefits-of-raisins
Raisins-shebazone

কিশমিশ হল শুকনো আঙ্গুরের ফল। এটি বিভিন্ন প্রকারের খাবারে ব্যবহার হয়, যেমন সালাড, কেক, বিভিন্ন প্রকারের মিষ্টি, চকলেট, ব্রেড, বিস্কুট, পায়েস, স্ন্যাক ইত্যাদি। এটি সহজেই সংরক্ষণ করা যায় এবং খেতেও খুব সুস্বাদু। এটিতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও প্রোটিনের উৎস রয়েছে।

আজকের পোস্টে আমরা কিশমিশের উপকারিতা, অপকারিতা ও গুণাগুণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।

কিশমিশ কিভাবে তৈরি হয়?

কিশমিশ তৈরি হয় শুকনো আঙ্গুর বা Grapes থেকে। প্রথমে আঙ্গুর ফলগুলি সঠিক রকমে তৈরি হওয়ার জন্য সূর্যের আলো ও হাওয়ার প্রভাবে পুরনো করে মেয়াদ বাড়ানো হয়। এরপর সেগুলি ধুয়ে নেয়া হয় যেন সেগুলোর উপর কোনও প্রয়োজনীয় অংশের ক্ষতি না হয়। এরপর সেগুলোকে যত্ন সহকারে সূক্ষ্মভাবে শুকানো হয়। শুকানোর প্রসেসে সেগুলোর শরীরের পানি সম্পূর্ণভাবে অপসারিত হয়ে যায় এবং এখন তারা ব্যবহারে উপযোগী হয়ে যায়।

কিশমিশ তৈরি হয় কয়েকটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং সাধারণত এই প্রক্রিয়া দ্বারা কিসমিস তৈরি হয়:

১. প্রথমে আঙ্গুরগুলি বাছাই করা হয় এবং পরিষ্কার করা হয়।
২. পরে সেগুলি ধুয়ে নেওয়া হয়।
৩. ধুয়ে পরে, সেগুলি খোল বা মেশিনে রেখে তাদের পানি সরানো হয়।
৪. তারপরে আঙ্গুরগুলি শুকানো হয় যার মাধ্যমে তাদের পানি সম্পূর্ণভাবে অপসারিত হয়। শুকানোর সাথে সাথে তাদের আর্দ্রতা হ্রাস পায়, যার ফলে সেগুলি কুঁচকে যায় এবং কিসমিস হয়ে যায়।
৫. শেষে, এই শুকনো আঙ্গুর পানি ও আস্বাদনীয় গুণগুলি ধরে থাকার জন্য বিভিন্ন প্রস্তুতিকৃত বা অপ্রস্তুতিকৃত উপাদানের মধ্যে কিশমিশের তৈরী হয়।

এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আঙ্গুর থেকে কিশমিশ তৈরি হয়। তারপর এই কিশমিশগুলি ব্যবহার করা হয় খাবারে বা অন্যান্য উদ্যোগে যেমন পাই, কেক, বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি ইত্যাদি প্রস্তুত করার সময়ে।

কিশমিশে কি কি পুষ্টি উপাদান রয়েছে?

কিশমিশ মানব পুষ্টিতত্ত্বে একটি সুস্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে পরিচিত। এটি বিভিন্ন পুষ্টিতত্ত্বের প্রধান উৎস যেমন প্রোটিন, বিটামিন, খনিজ, কার্বোহাইড্রেট ইত্যাদি সরবরাহ করে। কিশমিশে মূলত নিম্নলিখিত পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়:

বিটামিন এ: কিশমিশ ভিটামিন এ এবং ক্যারোটিনয়ের উৎস হিসেবে দর্শনীয়।
বিটামিন সি: এটি বড় পরিমাণে বিটামিন সি অন্তর্ভুক্ত করে যা প্রতিবেদনের অনুযায়ী শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ফোলেট: ফোলেট গর্ভবতী মহিলাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এবং এটি সন্তানের নিয়ন্ত্রণ ও নবজাতকে সুস্থ্য রাখার জন্য প্রয়োজন।
প্রোটিন: কিশমিশ মাঝারি পরিমাণে প্রোটিন সরবরাহ করে, যা মাংস, ডাল, এবং অন্যান্য উৎস থেকে পাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ।
খনিজসমূহ: কিশমিশ আমিনো অ্যাসিড, পটাসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সরবরাহ করে।

এছাড়াও, কিশমিশ শুষ্ক ফলগুলি হিসেবে মাত্রাতিরিক্ত ফাইবার সরবরাহ করে, যা পাচন ও ডাইজেস্টিভ সিস্টেমের জন্য ভালো। এটি পুষ্টিতত্ত্বে গর্ভবতী মহিলাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যেহেতু এটি ফোলেট এবং অন্যান্য গর্ভাবস্থা জনিত প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে।

নিচের পোস্টগুলো দেখতে পারেন-

পুষ্টিকর খাবার তালিকা ও এর প্রয়োজনীয়তা

দৈনিক কত ক্যালরী খাদ্য প্রয়োজন?

অনিয়মিত খ্যাদাবাস শরীরে যে সকল প্রভাব ফেলে

কিশমিশে কি কি উপকার পাওয়া যায়?

কিশমিশে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা মানব শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে। কিশমিশের প্রধান উপকারিতা নিম্নলিখিত হতে পারে:

ভিটামিন ও খনিজের উৎস: কিশমিশ ভিটামিন এ (বিটা-ক্যারোটিন), ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৬, পোটাসিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস ইত্যাদি খনিজ অনেকগুলি সরবরাহ করে। এই পুষ্টি উপাদানগুলি শরীরের স্বাভাবিক কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

প্রোটিন ও ফাইবার: কিশমিশে মাত্র 100 গ্রামে প্রায় 3 গ্রাম প্রোটিন ও 3.7 গ্রাম ফাইবার থাকে, যা প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় পরিমাণের প্রোটিন ও ফাইবার সরবরাহ করতে সাহায্য করে।

স্বাস্থ্যকর হৃদরোগ প্রতিরোধ: কিশমিশে মনের স্বাস্থ্য ও হৃদরোগ প্রতিরোধে মানসিক ও শারীরিক উন্নতি করার সহায়তা করতে পারে। তাত্ক্ষণিক প্রভাবে, এটি মনোবল বৃদ্ধি করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় যায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে: কিশমিশে প্রায় 59 গ্রাম স্যাকারোজ ও ফ্রাক্টোজ থাকে, যা প্রাকৃতিক মিষ্টি দ্রব্যতাত্ত্বিক গুণ ধারণ করে। এটি ডায়াবেটিসের ম্যানেজমেন্টে সাহায্য করতে পারে এবং রক্ত চিন্তার উপায় হিসাবে পরিচিত করা হয়।

চর্বি এবং শরীরের রক্তে লো-লেভেল কোলেস্টেরল: কিশমিশে কোলেস্টেরল ও অন্যান্য ক্যালসিয়ামকে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করার প্রমাণিত ক্ষমতা রয়েছে।

এই সব উপকারিতা মিলে কিশমিশ মানব স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পরিপাক ধরণ হিসাবে কাজ করে। এটি পুরোপুরি প্রাকৃতিক এবং সাধারণত অধিকাংশ মানুষের জন্য নিরাপদ।

কিশমিশের ক্ষতিকর দিকগুলো কি কি?

কিশমিশ মোটামুটি স্বাস্থ্যগত উপকারী হলেও কিছু ক্ষেত্রে আমাদের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে এবং কিশমিশের কিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে যেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

উচ্চ ক্যালরি ও সুগার পরিমাণ: কিশমিশে প্রায় 100 গ্রামে প্রায় 300 ক্যালরি ও প্রায় 59 গ্রাম সুগার রয়েছে। তাই অতিরিক্ত পরিমাণে কিশমিশ খাওয়ার ক্ষেত্রে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে এবং ডায়াবেটিস বা অন্যান্য অসুস্থতা উত্পন্ন হতে পারে।

সালসিলিক অ্যাসিড: কিশমিশে সালসিলিক অ্যাসিড রয়েছে, যা কিশমিশে খোসা উপস্থিত থাকলে তা অবশ্যই অধিক পরিমাণে থাকতে পারে। এটি কিশমিশে অ্যালার্জির কারণ হতে পারে এবং কিশমিশের গুণগত মান কমাতে পারে।

শরীরে সিয়ানিডের প্রসারণ: কিশমিশে কম পরিমাণে হাইড্রোজেন সালফাইড রয়েছে যা খোসা থেকে সিয়ানাইড উত্পন্ন করতে পারে। এটি অতিরিক্ত পরিমাণে প্রতিষেধ করা উচিত কারণ সিয়ানাইড অতিরিক্ত পরিমাণে ক্ষতিকারক হতে পারে।

নিচের পোস্টগুলো দেখতে পারেন-

ভেষজ ঔষধ নিম পাতা, উপকারিতা ও অপকারিতা

তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

পুদিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

অ্যালার্জি এবং এন্টি-নাটিডল সাইড ইফেক্ট: কিশমিশের সাথে কিছু মানুষের অ্যালার্জি থাকতে পারে যা তাদের মধ্যে চুলকানি, চোখের জ্বালা, চোখের লালসজ্জা ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমনঃ কিছু মানুষের পেটে কিশমিশের সাথে অমিল অনুশীলনের সমস্যা হতে পারে।

পেটের সমস্যা: অধিক পরিমাণে কিশমিশ খাওয়া পেটের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, যেমনঃ পেটে গ্যাস বা পাচনের সমস্যা।

উচ্চ ক্যালরি: যদি কিশমিশ অত্যন্ত উচ্চ ক্যালরি বা মিষ্টি যুক্ত হয়, তাহলে এটি ওজন বা ডায়াবেটিসের সমস্যা তৈরি করতে পারে।

দন্তের সমস্যা: কিশমিশের মধ্যে প্রায়ই খনিজ রয়েছে যা দন্তের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে, এবং যে লোকেরা দন্ত সংবেদনশীল তাদের সাবধানে কিশমিশ খেতে হবে।

তবে, এই সমস্যাগুলি সাধারণত নিরাপদ মাত্রাতে পরিস্কার করা যেতে পারে এবং যথারীতি সংখ্যক কিশমিশ খাওয়া যেতে পারে এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তবে, যদি কোনও সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সংগৃহীত