এই শীতে চুলের যন্ত

শিতে, চুল, যন্ত, হেয়ার, কেয়ার, winter, hair, care

শীতের সঙ্গে চুল আর ত্বকের একধরনের শত্রুতা আছে বলেই মনে হয়। শীত মৌসুমে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায়, বেড়ে যায় ধুলাবালুর প্রকোপ। সে কারণে চুল রুক্ষ ও নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ে। ঠিকমতো যত্ন নিলে এই শীতেও চুল থাকবে ঝরঝরে, সুন্দর আর সতেজ। তার আগে জেনে নিতে হবে এ সময় চুলে কী কী সমস্যা হতে পারে। এ সময় চুলের সাধারণ সমস্যা এবং তার প্রতিকারের উপায় নিয়েই আমাদের আজকের পোস্ট।

স্ক্যাল্প বা মাথার ত্বক হয় দুই রকমের—শুষ্ক ও তৈলাক্ত। শুষ্ক ত্বকে খুশকির সমস্যা বেশি দেখা দেয় আর মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলেও চুল শুষ্ক হয়ে যায়। ত্বকের ধরন বুঝে যত্ন নিতে হয়, তেমনি চুলেরও ধরন বুঝে যত্ন নিতে হবে।

চুলের যন্তে কি করবেনঃ

মাথার তৈলাক্ত ত্বকের যত্নেঃ

মাথার তৈলাক্ত ত্বকে লুকিয়ে থাকা খুশকির প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। অর্থাৎ খুশকি ত্বকের সঙ্গে লেগে থাকে। এ সমস্যা থেকে রক্ষা পেতে মৌরি এবং সমপরিমাণ পানি সারা রাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন ভালোমতো বেটে মাথার ত্বকে এক থেকে দেড় ঘণ্টা লাগিয়ে রাখুন। তারপর শ্যাম্পু করে ধুয়ে ফেললে খুশকি দূর হবে।

মাথার শুষ্ক ত্বকের যত্নেঃ

শীতকালে মাথার শুষ্ক ত্বক আরও বেশি শুষ্ক হয়ে যায়। খুশকি বেড়ে যায়, বাড়ে বিড়ম্বনাও। এর থেকে মুক্তি পেতে চাইলে দেড় টেবিল চামচ মেথি ও দেড় টেবিল চামচ শুকনা আমলকী এক কাপ পানিতে সারা রাত ভিজিয়ে রাখার পর বেটে ফেলুন। এরপর এর সঙ্গে মেশান দুই-তিন চা-চামচ মধু। এই মিশ্রণ চুলের গোড়ায় লাগালে খুশকি যেমন দূর হবে তেমনি চুলে পুষ্টি যোগাতেও সাহায্য করবে। এ ক্ষেত্রে উপাদানগুলো সঠিক পরিমাণে নেওয়া খুব জরুরি।

চুল ধুতে হবে নিয়মিতঃ

ঠান্ডার দিনে গোসল করার একধরনের ভীতি দেখা যায় অনেকের মধ্যে। গোসলের জন্য শরীরে গরম পানি ব্যবহার করা হলেও মাথায় গরম পানি ব্যবহার করা যায় না। এ জন্য অনেকে গোসলের সময় চুল ভেজান না। ফলে শ্যাম্পুও করা হয় না নিয়মিত। এটি একেবারেই করা উচিত নয়। বরং এ সময় বাইরে অনেক বেশি ধুলাবালু উড়ে বলে রোজ চুল পরিষ্কার করা উচিত। ঠান্ডা পানি দিয়েই চুল ধোয়ার কাজ সেরে ফেলতে হবে।

চুলের যত্নে কী করা উচিতঃ

রুক্ষ আবহাওয়ায় মৃদু শ্যাম্পু ব্যবহার করা ভালো। এক কাপ গরম পানিতে পাঁচ থেকে ছয়টা রিঠা সারা রাত ভিজিয়ে রেখে পরদিন তা দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলতে পারেন। এটি শ্যাম্পুর কাজ করে থাকে। চুল রং করা থাকলে এই মিশ্রণের ব্যবহারে অনেক সময় চুল রুক্ষ বোধ হতে পারে, এমন হলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এছাড়া যেহেতু রোজ শ্যাম্পু করা হবে, তাই শ্যাম্পুর সঙ্গে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নেওয়া যেতে পারে এরপর চুল ধুয়ে নিবিড় কন্ডিশনিং করুন।

চুলের রুক্ষতা রোধে যা করবেনঃ

চুলের রুক্ষ ভাব দূর করতে নিয়মিত তেল মাখতে হবে। তবে চুলে তেল দিয়ে বাইরে বের হওয়া ঠিক হবে না, এতে আরও বেশি ময়লা জমবে চুলে। বাইরে বের হলে চুল ভালোমতো বেঁধে, ঢেকে রাখতে হবে। শীতে টুপি ও স্কার্ফ দিয়ে চুল ঢেকে রাখুন। ঠান্ডা বাতাস থেকে আপনার চুল রক্ষায় প্রথমে সিল্ক বা সাটিন স্কার্ফ দিয়ে এবং এর পরে তুলা বা পশমি কাপড় দিয়ে মাথা ঢাকুন। সে ক্ষেত্রে সিল্ক বা সাটিন হলো আপনার সেরা বিকল্প। কারণ সরাসরি তুলা বা পশমি কাপড় দিয়ে ঢাকলে চুলে ঘর্ষণ লাগতে পারে, এতে চুলের ডগা ফেটে যেতে পারে এমনকি চুল ভেঙ্গে যেতেও পারে।

চুল ঝলমলে ও কোমল করতে যা করবেনঃ

একটি আস্ত পাকা কলা, ছোট আকারের তিনটি দেশি পেঁয়াজ ও এক টেবিল চামচ মধু বেটে একসঙ্গে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর চুলের গোড়া এবং সম্পূর্ণ চুলে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এরপর শ্যাম্পু করে নিন। কিছুদিন ব্যবহারে চুল যেমন মোলায়েম হবে তেমনি গোড়াও হবে মজবুত।

চুল শুকাতে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ব্যবহার করবেন নাঃ

শুধু শীত নয়, স্ট্রেইটনার, হেয়ার ড্রায়ার ও চুলের স্টাইলিংয়ের অন্যান্য বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম চুলের ক্ষতি করে সব সময়। এগুলোর ব্যবহারে আপনার মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়তে পারে এবং খুশকি জন্ম দিতে পারে। তাই শীতে এগুলোর ব্যবহারে সাবধান হতে হবে।

ছত্রাক নির্মূলে যা করবেনঃ

এই ঋতুতে আপনার মাথার ত্বকে সাদা বা হলুদ রংয়ের ছত্রাক দেখতে পারেন, এগুলো আপনার কাঁধে ঝড়ে পড়তেও পারে। শীতকালে প্রায়ই খুশকি হওয়ার অভিযোগ শোনা যায়। আর ছত্রাকের সংক্রমণ বা মাথার শুষ্ক ত্বক খুশকি সৃষ্টির প্রধান কারণ হতে পারে। তাই শীতে এমন শ্যাম্পু ব্যবহার করুন যাতে স্যালিসিলিক অ্যাসিড, জিংক পাইরিথিওন, কেটোকোনাজল ও সেলেনিয়াম সালফাইডের মতো সক্রিয় রাসায়নিক রয়েছে, যেগুলো মাথার ত্বকের ছত্রাক ও খুশকি প্রতিরোধ করবে।

খুশকির সমস্যার করণীয়ঃ

খুশকির সমস্যা বেশি বেড়ে গেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। খুশকি একধরনের একজিমা। এর সংক্রমণে মাথার চামড়া উঠে যেতে পারে, অনেক সময় লালচে গুড়ি গুড়ি গোটা দেখা দেয়। চুলকালে এটি থেকে ঘা হয়ে যেতে পারে। এমন হলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ঔষধ অথবা মলম ব্যবহার করতে হবে। এ ছাড়া অল্প খুশকি দেখা দিলেই ভালো মানের খুশকিনাশক শ্যাম্পু নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন।

সংগৃহীত