মরিঙ্গা বা সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা

moringa powder মরিঙ্গা পাউডার উপকারীতা ও অপকারীতা খাওয়ার নিয়ম এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, দাম, মূল্য সজিনা পাতার পাউডার খাওয়ার নিয়ম মরিঙ্গা পাউডার কি কোথায় পাওয়া যায় সজনে পাতা ত্বকের জন্য উপকারী শজনে পাতার গুনাবলী

সজনে আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় সবজি। সজনে বিভিন্নভাবে রান্না করা হয়। সজনে গাছের বৈজ্ঞানিক নাম মরিঙ্গা ওলেইফে (Moringa Oleifera)। অসম্ভব ঔষধি গুণে ভরপুর থাকার কারণে মরিঙ্গাকে মিরাকেল ট্রি বলা হয়ে থাকে। পুষ্টি বিজ্ঞানীরা মরিঙ্গাকে পুষ্টির ডিনামাইট তথা ন্যাচারাল মাল্টি-ভিটামিন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই গাছের পাতাকে বলা হয় ‘সুপার ফুড অব নিউট্রিশন’। মরিঙ্গা পাউডার বা সজিনা পাতা গুঁড়া অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাবার। এতে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, জিংক, আয়োডিন, ভিটামিন বি 9, ভিটামিন এ সহ দেহের জন্য উপকারী অন্যান্য ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সকল অ্যামিনো এসিড পাওয়া যায় এই জাদুকরী গুণসম্পন্ন ভেষজে।

প্রতি ১০০ গ্রাম সজনে পাতা থেকে পাওয়া যায় –

শর্করা ৮.২৮ গ্রাম

ফাইবার ২.০ গ্রাম

স্নেহ ১.৪০ গ্রাম

প্রোটিন ৯.৪০ গ্রাম

ক্যালসিয়াম ১৮৫ মিলিগ্রাম

লৌহ ৪.০০ মিলিগ্রাম

ম্যাগনেশিয়াম ১৪৭ মিলিগ্রাম

সোডিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম

ভিটামিন এ প্রায় ৩৭৮ মাইক্রোগ্রাম

ভিটামিন সি ৫১.৭ মিলিগ্রাম।

মরিঙ্গা পাউডার (Moringa Powder) কি?

মরিঙ্গা পাউডার হল একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যতালিকাগত সম্পূরক যা মরিঙ্গা সজনে গাছের পাতা থেকে তৈরি। যা ভিটামিন, খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।

Moringa Powder কিভাবে তৈরি করা হয়?

মোরিঙ্গা বা সজনে গাছ থেকে পাতা সাবধানে সংগ্রহ করা হয়। আদর্শভাবে, অল্প বয়স্ক পাতাগুলি বেছে নেওয়া হয় কারণ এই পাতাগুলোর একটি হালকা স্বাদ থাকে। কাটা পাতাগুলি যে কোনও ময়লা, ধ্বংসাবশেষ বা দূষক অপসারণের জন্য একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিস্কার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়। এই ধাপটি চূড়ান্ত পণ্যের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করে। পরিষ্কার করা পাতাগুলি একটি একক স্তরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং কম তাপমাত্রায় শুকানো হয়। পাতার সূক্ষ্ম পুষ্টি সংরক্ষণের জন্য এই শুকানোর প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোদে শুকানো বা বায়ু শুকানো সাধারণ পদ্ধতি। একবার সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে পাতাগুলিকে একটি গুঁড়োতে সূক্ষ্মভাবে গুড়া করে নেওয়া হয়। এটি বিভিন্ন সরঞ্জাম ব্যবহার করে করা যেতে পারে, যেমন গ্রাইন্ডার বা মিলিং মেশিন। লক্ষ্য একটি মসৃণ, সূক্ষ্ম পাউডার তৈরি করা। কিছু নির্মাতারা অবশিষ্ট মোটা কণা অপসারণের জন্য পাউডারটি চালনি বেছে নেয়।চূড়ান্ত মরিঙ্গা পাউডারটি আর্দ্রতা, আলো এবং বাতাস থেকে রক্ষা করার জন্য বায়ুরোধী পাত্রে সাবধানে প্যাকেজ করা হয়, যা এর গুণমানকে হ্রাস করতে পারে। সঠিক প্যাকেজিং পাউডারের সতেজতা এবং পুষ্টির মান বজায় রাখতে সাহায্য করে। পুরো প্রক্রিয়াটি মোরিঙ্গা পাতার সর্বাধিক পুষ্টি উপাদান ধরে রাখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যার ফলে সজনে পাতার গুড়া অপরিহার্য পুষ্টির একটি অত্যন্ত ঘনীভূত এবং সুবিধাজনক উৎস তৈরি করে।

মরিঙ্গা বা সজিনার উপকারিতাঃ

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ

মরিঙ্গা শরীরের প্রতিরোধক ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। এটি শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য, ভারি ধাতু অপসারণ করে দেয়। ক্যান্সার রোগীদের শরীরে রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপি নিতে সহায়তা করে।

জেনে নিন – “পুষ্টিকর খাবার তালিকা ও এর প্রয়োজনীয়তা

ত্বক উজ্জ্বল  করতেঃ

মরিঙ্গার শুঁটি থেকে তৈরি সবজি বা তার বীজের তেল ত্বকে লাগালে ত্বক সবসময় চকচকে করে। কারণ এটিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ পাওয়া যায়। ভিটামিন এ চামড়ার সৌন্দর্য বজায় রাখায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মরিঙ্গা সেবন করলে শুষ্ক ত্বকও ফুটে ওঠে। শুধু তাই নয়, মরিঙ্গা আপনার মুখের ব্রণ নির্মূল করে এবং আপনার ত্বক পরিষ্কার করে তোলে।

এই শীতে ত্বকের যত্নে কিছু টিপস জেনে নিন।

শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধিঃ

মরিঙ্গার ফলের সাহায্যে শুক্রাণুর সংখ্যা এবং মান উন্নত করা যায়। মরিঙ্গা মাসিকের সময় নারীর শরীরের অনেক সমস্যাও দূর করে। সহজন খেলে মহিলাদের গর্ভাবস্থার সময় অনেক সমস্যাও দূর হয়। পুরুষদের শুক্রাণু সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের বীর্য ঘনীভূত করার সহায়তা করে।

শিশুদের জন্যঃ

শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্যও মরিঙ্গা গ্রহণের গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করা হয়। মরিঙ্গায় ক্যালসিয়াম, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাস ইত্যাদি সব অনেক পরিমাণ পাওয়া যায়। শিশুদের দেহে ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁত তৈরির সহায়ক। যদিও গর্ভবতী মহিলাদের মরিঙ্গা সেবন করানো হয় তাহলে তাদের সন্তানদের শরীরও ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে। মরিঙ্গায় পাওয়া সব উপাদানগুলো একটি শিশুর সুস্থ শরীর পালনে একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

মাথা ব্যাথার চিকিৎসাঃ

মরিঙ্গা পাতার মাধ্যমে মাথা ব্যাথা পরিত্রাণ পেতে পারেন। মাথা ব্যাথায় এর সুবিধা গ্রহণ করতে মরিঙ্গার সবজি বানিয়ে খেতে পারেন। আপনি চাইলে সহজনের পাতা পিষে এটাকে হালকা গরম করে মাথায় লেপেও এর সুবিধা উপভোগ করতে পারেন। তাছাড়া, এর বীজ পিষে এর গন্ধ শুঁকলেও মাথা ব্যথা দূর হতে পারে। মরিঙ্গা পাউডারও মাথাব্যথা দূর করতে ব্যবহৃত হয়।

এই পোস্টটি দেখতে পারেন – “মাইগ্রেনের ব্যাথা নিয়ে বিস্তারিত

উচ্চ রক্তচাপঃ

উচ্চ রক্তচাপ থেকে ভুগতে থাকা ব্যক্তিরা মরিঙ্গার সাহায্যে পরিত্রাণ পেতে পারেন। খাবার লবন অর্থাৎ ‘সোডিয়াম ক্লোরাইড’ ব্ল্যাড প্রেসার রোগীদের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অপরদিকে, ‘পটাশিয়াম লবন’ কোন ক্ষতি করেনা। মরিঙ্গার ডাঁটাতে সোডিয়াম ক্লোরাইড নেই বললেই চলে। কাজেই এতে ব্ল্যাড প্রেসার নিয়ন্ত্রিত থাকে।

পাচক সমস্যা নিষ্পত্তিঃ

মরিঙ্গার ব্যবহার হজম, ডায়রিয়া, কোলাইটিস ইত্যাদি পচন সম্পর্কিত সমস্যাগুলি দূর করতেও করা হয়। মরিঙ্গার তাজা পাতার রস এক চা চামচ মধুতে নারকেলের জল মিশিয়ে পান করলে পাচক সম্পর্কিত সমস্ত সমস্যা থেকে আপনি ত্রাণ পাবেন। আপনি যদি চান, আপনি তার শুঁটিরসবজি তৈরি করেও খেতে পারেন। এটিও আপনাকে কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি সমস্যা থেকে পরিত্রাণ দেবে। শুধু তাই নয়,  কিডনি এবং মূত্রাশয়ের সমস্যায় ভোগা রোগীদেরও এই মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ানো যেতে পারে।

রক্তস্বল্পতা দূর করেঃ

শরীরে রক্তের পরিমান কমে গেলে পানি দিয়ে মরিঙ্গার ডাঁটা সেদ্ধ করে তার ক্বাথ এবং ডাঁটা চিবিয়ে খেলে রক্তল্পতা দূর হয়। তবে বেশ কিছুদিন নিয়মিত খাওয়া দরকার।

রক্তশূন্যতা বা Anemia নিয়ে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন।

এছাড়াও মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক, বদহজম, সর্দি, জ্বর ইত্যাদি বিভিন্ন রোগের উপকার পাওয়া যায়।

কালিজিরা – একটি প্রাকৃতিক মহৌষধ” – বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন।

মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার নিয়মঃ

আপনি চায়ের সঙ্গে মরিঙ্গার গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া ক্যাপসুল আকারেও মরিঙ্গা খেতে পারেন। একটি কাপের মধ্যে মরিঙ্গা নিন এবং তাতে এক থেকে দু’কাপ জল ফুটিয়ে নিন। আপনি মিশ্রণটি ছেঁকে নিয়ে ঐ জলটা খেতে পারেন। এটিকে সুপারফুড সিজনিং হিসাবে ভাবার সবচেয়ে সহজ উপায় – তাই এটিকে আপনি অন্য কোনও সবুজ ভেষজ বা মশলা হিসাবে ব্যবহার করুন।

জেনে নিন – “অতিরিক্ত চা, কফি পানের ক্ষতিকর দিক“।

মরিঙ্গা বা সজিনার অপকারিতাঃ

কোনো কিছুর অতিরিক্ত গ্রহণ শরীরের জন্য ভালো নয়। তাই সজনে পাতার গুঁড়া বা রস একদম নিয়মিত না খেয়ে একটু বিরতি দিয়ে খাওয়া ভালো। ১০-১৫ দিন খাওয়ার পর কিছুদিন বিরতি দিয়ে খেলে ভালো হয়। সজনে পাতার অনেক উপকারিতা থাকলেও এটি অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে সৃষ্টি হতে পারে বিভিন্ন সমস্যা।

যেমন, বমি বমি ভাব, পেটের সমস্যা, ক্ষুধামন্দা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।

ব্লাড প্রেসারের ঔষুধ খাওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত সজনে পাতার গুঁড়া বা রস খেতে থাকলে ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে।

সজনে পাতা সংলগ্ন ডালগুলো আমাদের দেহের জন্য ক্ষতিকর। এ ডালগুলোতে ক্ষতিকর উপাদান থাকে, যা যেগুলো আমাদের দেহের ইমিউনিটি সিস্টেমের ক্ষতি করে।

গর্ভাবস্থায় সজনে পাতা খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে।

সংগৃহীত