রক্ত আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলোর একটি। যা দেহের সকল অংশে অক্সিজেন এবং সব ধরনের পুষ্টি উপাদান বয়ে নিয়ে যায়। শরীরে রক্তের কোনো উপাদান কম থাকলে সুস্থভাবে বাঁচা সম্ভব নয়। রক্তে আছে লাল রক্তকণিকা, সাদা রক্তকণিকা, এবং প্লেটলেট।
লাল রক্ত কোষে আছে বিশেষ কিছু আয়রন কম্পাউন্ড, মেডিকেল টার্মে যাকে বলা হয় হিমোগ্লোবিন (Hemoglobin). হিমোগ্লোবিনের প্রধান কাজ হলো হৃদপিণ্ড থেকে দেহের সকল অঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করা। হিমোগ্লোবিন দেহকোষ থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইডও সংগ্রহ করে এবং তা পুনরায় ফুসফুসের কাছে পৌঁছে দেয় যাতে তা নিঃশ্বাসের সঙ্গে শরীর থেকে বের হয়ে যেতে পারে। সুতরাং রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে শরীর অক্সিজেনের অভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে। যার ফলে রক্তশুন্যতার মতো রোগও হয়।
জেনে নিন – রক্তশূন্যতা বা Anemia নিয়ে বিস্তারিত
রক্তশূন্যতা থেকে বাঁচার উপায় হলো হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় এমন কিছু খাবার খাওয়া। আজকের পোস্টে এমন কিছু খাবারের তালিকা দেওয়া হলো যেগুলো নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়বে। তাহলে শুরু করা যাক।
লাল মাংসঃ
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রাণিজ প্রোটিন। সকল ধরনের লাল মাংস যেমন, গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং কলিজা আয়রণের সবচেয়ে ভালো উৎসগুলোর একটি। আয়রণ হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য অত্যান্ত জরুরি। মুরগির মাংস লাল মাংস না হলেও তাও দেহতে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ সরবরাহ করতে পারে।
মাছঃ
কিছু মাছে প্রচুর আয়রন থাকে। যারা রক্তাল্পতায় ভুগছেন, তারা বাছাই করা কিছু মাছ খেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে রুই, কাতলা, ইলিশ খাওয়া যেতেই পারে।
সামুদ্রিক খাদ্যে আয়রণ এবং অন্যান্য খনিজ পুষ্টি উপাদান আছে প্রচুর পরিমাণে। সুতরাং অ্যানেমিয়া বা রক্তশুন্যতার রোগীদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অয়েস্টার, ক্লামস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক খাদ্য রাখতে পারেন।
শস্যজাতীয় খাদ্যঃ
চাল, গম, বার্লি এবং ওটস রক্তশুন্যতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য চমৎকার আয়রণ সমৃদ্ধ খাবার। এসব খাবার প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেটসও সরবরাহ করে। লাল চাল বিশেষ করে সব বয়সীদের জন্যই আয়রণের একটি সমৃদ্ধ উৎস বলে গণ্য করা হয়।
শাক-সবজিঃ
প্রতিদিন তাজা সবজি খেলে আয়রন ও অন্যান্য খনিজ পুষ্টি এবং নানা ধরনের ভিটামিনের ঘাটতি মিটবে। আলু, টমেটো, কুমড়া এবং বিটরুট আয়রনের ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করে। তাছাড়া স্পিনাক সহ অন্যান্য সবজিও বেশ আয়রন সমৃদ্ধ।
পুষ্টিকর খাবার তালিকা ও এর প্রয়োজনীয়তা
ফলঃ
সবধরনের রসালো সাইট্রাস ফল, যেমন, আম, লেবু এবং কমলা ভিটামিন সি-র সবচেয়ে ভালো উৎস। আর দেহে আয়রন দ্রুত শুষে নেওয়ার জন্য ভিটামিন সি সবচেয়ে জরুরি। এর ফলে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন গতিও বাড়ে। স্ট্রবেরি, আপেল, তরমুজ, পেয়ারা, চেরি এবং বেদানাতেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে।
শুকনো ফল বা ড্রাই ফ্রুটসঃ
হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে শুকনো ফল খেতে পারেন। কিশমিশ, কাজু, খেজুরে প্রচুর আয়রন রয়েছে। অ্যাপ্রিকটেও প্রচুর পরিমাণে আয়রন আছে। খেজুর শরীরে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কমাতে সাহায্য করে।
ডিমঃ
ডিম হলো আরেকটি জনপ্রিয় খাদ্য যাতে আছে উচ্চমাত্রার আয়রন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। ডিমের হলুদ কুসুমে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খনিজ পুষ্টি এবং ভিটামিন। আর এ কারণেই দুর্বল লোকদেরকে প্রতিদিন সেদ্ধ ডিম খেতে বলা হয়।
দুগ্ধজাত খাবারঃ
দুগ্ধজাত খাবার যেমন দুধ এবং পনির শরীরে রক্ত তৈরিতে অনেক সাহায্য করতে পারে। সয়া এবং বাদাম দুধ রক্ত বাড়াতে গরুর দুধের চেয়ে ভাল কাজ করে। এটি হার্টকে সুস্থ রাখে এবং রক্তের মাত্রা ঠিক রাখে।
বাদামঃ
যে কোনো ধরনের বাদামই মানবদেহের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়। কাঠ বাদাম, কাজু বাদাম, হিজলি বাদাম, চীনা বাদাম এবং আখরোট খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে দ্রুতগতিতে।
ডার্ক চকোলেটঃ
শিশুদের ও বড়দের প্রিয় একটি খাবার ডার্ক চকোলেটেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আর এ কারণেই অনেক ডাক্তাররাও ডার্ক চকোলেট খেতে বলে।
তাছাড়া – বীট, পেস্তা, ডুমুর, বেদানা, তিল ইত্যাদিতেও রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রণ ও খনিজ উপাদান। যা শরীরের রক্ত বৃদ্ধিতে অনেক উপকারী।
এই সবগুলো খাদ্যই দেহে আয়রনের ঘাটতি মিটিয়ে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি করে। সুতরাং নিয়মিতভাবে এই খাবারগুলো গ্রহণ করে দেহে রক্তের পরিমাণ, জীবনী শক্তি এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে থাকুন।
সংগৃহীত
Leave a Reply