হঠাৎ করে খেয়াল করলেন মোটা হয়ে যাচ্ছেন বা স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যাচ্ছে আপনার! ডায়েট কিংবা দিনে ২ বেলা না খেয়ে থাকার পরও কমছে না ওজন কিংবা অতিরিক্ত খেয়েও বাড়ছে না স্বাস্থ্য! চিন্তা ঢুকে গেলো মাথায়। নিজের অজান্তে অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে অল্প বয়সেই মুটিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। যা আপনাকে বুড়ো বানিয়ে ফেলছে। যেকোনো বেলা না খেয়ে থাকা কিংবা মধ্যরাতে খাবারের অভ্যাসের কারণে মূলত ওজন বাড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের রোগ শরীরে ধরা পরে।
ঘরে কিংবা ঘরের বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন, সেখানে যদি দ্রুত সুস্বাদু খাবার হাতের লাগালে থাকে তাহলে বেশি খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এ ছাড়া আপনি যদি না জানেন যে আপনি কতটুকু খেতে চান, সেক্ষেত্রেও খাবার খাওয়ার পরিমাণ আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। ফলে শরীরে বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।
অতিরিক্ত খাবার না খাওয়ার একটি উপায় হলো আপনাকে বুঝতে হবে খাবার আপনার শরীরকে কীভাবে প্রভাবিত করে। এছাড়া একসঙ্গে বেশি পরিমাণ খাবার খেলে তা শরীরে যেসব পরিবর্তন আনতে পারে তার মধ্যে একটি হলো আরও বেশি ক্ষুধা অনুভব করা। অবশ্য পাকস্থলীর আকার বাড়ে বলেই এমনটি হয় তা কিন্তু নয়। চলুন জেনে নিই অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার কিছু ক্ষতিকারক দিক –
শরীরের অতিরিক্ত চর্বিঃ
আপনার দৈনিক ক্যালোরি ভারসাম্য নির্ধারণ করা হয় আপনি কত ক্যালোরি গ্রহণ করেন আর কত ক্ষয় করেন এর উপর। আপনি যে পরিমাণ ক্যালোরি গ্রহণ আর যদি তার চেয়ে কম পরিমাণ ব্যয় করেন তাহলে বাকি ক্যালোরি আপনার শরীরে অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে যুক্ত হতে শুরু করবে। তাই প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খাবার আপনাকে মোটা করে তুলতে পারে। তাছাড়া আপনার খাবারের তালিকায় ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুড রাখবেন না, এই জাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণে চর্বি ও বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যান্ত ক্ষতিকারক। এই বিষয়ে আপনি “ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুডের ক্ষতিকর দিক” – এই পোস্টটি দেখতে পারেন।
ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে বাধাঃ
প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাবার খাওয়া, আমাদের দুটি প্রধান হরমোন ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে। এক- ঘেরলিন, যা ক্ষুধাকে উদ্দীপিত করে এবং দুই- লেপটিন, যা ক্ষুধাকে দমন করে।
আপনি যখন কিছুক্ষণ না খেয়ে থাকেন, তখন ঘেরলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। তারপরে, আপনি খাওয়ার পরে লেপটিনের মাত্রা আপনার শরীরকে বলে যে এটি পূর্ণ। তবে অতিরিক্ত খাওয়া এই ভারসাম্যকে ব্যাহত করে। তবে চর্বি, লবণ বা চিনি বেশি খাবার খেলে ডোপামিনের মতো ভাল হরমোন নির্গত হয়, যা আপনার মস্তিষ্কের আনন্দ কেন্দ্রগুলোকে সক্রিয় করে।
বিভিন্ন ধরণের রোগের ঝুঁকি বাড়ায়ঃ
যদিও মাঝে মাঝে অতিরিক্ত খাওয়া দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে না। তবে দীর্ঘস্থায়ী অতিরিক্ত খাওয়া স্থূলতার দিকে আপনাকে পরিচালিত করে। আর এই পরিস্থিতিতে আপনার শরীরে নানা ধরনের রোগ বাসা বাঁধতে পারে। যেমন –
ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়ঃ
অনিয়মিত অভ্যাসের কারণে আপনার শরীরে গ্লুকুজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং টাইপ ২ ডায়বেটিসের আশঙ্কা অনেকটা বাড়িয়ে দেয়।
খাদ্যে হজমে সমস্যা দেখা দেয়ঃ
সকালের নাস্তা না খেয়ে একেবারে দুপুরের খাবার খেলে হজম সমস্যা দেখা দেয়। কারণ খুদা পেটে যেকোনো কিছু খেলে সরাসরি আমাদের শরীরে প্রভাব ফেলে। তাই প্রতি বেলায় নিয়মিত খাবারের অভ্যাস করুন।
রক্তচাপ বৃদ্ধি করেঃ
মধ্য রাতে খুদা লাগলে ভাজা পোড়া কিংবা মিষ্টি জাতীয় কিছু খেলে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। যার কারণ হার্টের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় এবং স্ট্রোকের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
শরীরে মেদ জমায়ঃ
মধ্যরাতে খাবার খেয়ে সাথে সাথে শুয়ে পরলে তা হজম হয় না এবং শরীররে মেদ বৃদ্ধি করে। তাই রাতে ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে রাতের খাবার সেরে ফেলুন এবং কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে ঘুমিয়ে পড়ুন।
এই সব সমস্যা থেকে বাচতে আপনাকে জানতে হবে – “পুষ্টিকর খাবার তালিকা ও এর প্রয়োজনীয়তা“।
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ব্যাহতঃ
অতিরিক্ত খাওয়া মস্তিষ্কের কার্যকারিতার ক্ষতি করতে পারে। এ ছাড়া বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্বাভাবিক ওজনের ব্যক্তিদের তুলনায় অতিরিক্ত ওজন স্মৃতিশক্তিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। আপনার মস্তিষ্কে আনুমানিক প্রায় ৬০ শতাংশ চর্বি রয়েছে। তাই অ্যাভোকাডো, বাদাম বাটার, চর্বিযুক্ত মাছ এবং জলপাই তেলের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি খাওয়া মানসিক অবক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করতে পারে।
বমি বমি ভাবঃ
নিয়মিত অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে বমি বমি ভাব এবং বদহজমের মতো অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের পাকস্থলী আনুমানিক একটি শক্ত মুঠির আকারের এবং খালি হলে প্রায় ২.৫ আউন্স (৭৫ মিলি) ধরে রাখতে পারে, যদিও এটি প্রায় ১ কোয়ার্ট (৯৫০ মিলি) ধরে রাখতে পারে। অবশ্য এই সংখ্যাগুলো আপনার আকার এবং আপনি কতটা নিয়মিত খাচ্ছেন তার ওপর ভিত্তি করে পরিবর্তিত হয়।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাঃ
প্রচুর পরিমাণে খাবার খেলে আপনার পরিপাকতন্ত্রে চাপ পড়ে। এতে গ্যাস এবং ফোলাভাব হতে পারে। এ ছাড়া গ্যাস উৎপাদনকারী খাবারের মধ্যে মানুষ যে আইটেমগুলো অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা রাখে তা হলো- মশলাদার, ভাজাপোড়া এবং চর্বিযুক্ত খাবার এর পাশাপাশি কার্বনেটেড পানীয় যেমন- সোডা। অন্যদিকে মটরশুটি, কিছু শাকসবজি এবং পুরো শস্যও গ্যাস তৈরি করতে পারে, যদিও এগুলো প্রায়শই বেশি খাওয়া হয় না।
অলসতা বা ঘুম পেতে পারেঃ
অতিরিক্ত খাওয়ার পরে, অনেকে অলস বা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। এটি প্রতিক্রিয়াশীল হাইপোগ্লাইসেমিয়া নামক একটি ঘটনার কারণে হতে পারে। কেননা খাবার খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে যায়।
তাছাড়া বিভিন্ন গবেষণা থেকে পাওয়া যায়,
অক্সফোর্ড জার্নাল অনুসারে, কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারী যদি তার খাবার নিয়ম অনুসারে না খান, তাহলে তার অনাগত সন্তানের ওপর এর নানা প্রভাব পড়ে।
চীনের মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক তার গবেষণায় জানিয়েছেন, কখনোই একসঙ্গে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া ঠিক নয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাওয়া উচিত। সময়মতো খাবার খেলে হজম-প্রক্রিয়া ভালো হয়, যা স্বাস্থের জন্য বেশ উপকারী।
যুক্তরাষ্ট্রের জীববিজ্ঞানী গিরিশ মেলকানি উনার এক গবেষণাপত্রে লিখেছেন, সময়মতো খাবার গ্রহণ করার ফলে কম বয়সে বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া ও হার্টের যে সমস্যা হয় তাও দূর হয়।
বোস্টনের ব্রড ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সময়মতো খাবার খাওয়া আপনাকে গ্যাস্ট্রিক, আলসার, ওজনহীনতাসহ মারাত্মক কিছু রোগ থেকে রক্ষা করে আপনাকে রাখবে সুস্থ, সবল ও সতেজ।
এই পোস্টটি দেখে আসতে পারেন – “রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কিছু কার্যকরী উপায়“।
সংগৃহীত
Leave a Reply