খেজুর কি এবং এর উৎপত্তি
খেজুর হল একটি ফলের নাম। এটি খেজুর প্যাল্ম গাছের ফল। এই ফলটি বৃষ্টিপাত নেয়ার পর বড় বড় ফুল থেকে বিকশিত হয়। এই ফলটি এশিয়া, আফ্রিকা, ও উত্তর আমেরিকা এবং কেন্দ্রীয় ও দক্ষিণ আমেরিকার অনেক অঞ্চলে উত্পাদিত হয়। খেজুরের বিভিন্ন ধরণের রস, আটা, মধু, জেলি ইত্যাদি তৈরি হয়। এছাড়াও খেজুর ক্ষেতে এক ধরনের মিঠাই ও পানীয় তৈরি করা হয়।
খেজুর গাছে বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে, যেমন: Medjool, Deglet Noor, Zahidi, Barhi ইত্যাদি।
খেজুর গাছ
খেজুর গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Phoenix dactylifera। এটি একটি প্যাল্ম গাছ, যা খেজুর ফল উত্পাদন করে। এটি একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী প্যাল্ম গাছ, যা মৌলিকভাবে আফ্রিকা এবং আশিয়ার উষ্ণমধ্য এবং উষ্ণউপনভূমি অঞ্চলে উত্পন্ন হয়। খেজুর গাছটি সাধারণত ১৫-২৫ মিটার উচ্চতা প্রাপ্ত হয় এবং তার ডালগুলি খুবই বড় ও বেতারে হয়। এই গাছের মধ্যে পাতা অথবা বিশাল হলুদ বর্ণের ফুল পাওয়া যায়, যেগুলো আকর্ষণীয় এবং মধুময় হয়।
১ টি খেজুরে কত ক্যালরি থাকে?
একটি খেজুরে প্রায় ২০-৩০ ক্যালরি রয়েছে। এটি মোটামুটি ১ অথবা ২ গ্রাম ওজনের হতে পারে। তবে, এই মাত্রা বিভিন্ন ধরণের খেজুরের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তন হতে পারে।
খেজুরের প্রকারভেদ
খেজুরের বিভিন্ন প্রকারের আছে, যা সাধারণত তার উৎপত্তি, রং, আকার, ও স্বাদের ভিন্নতা ভিত্তিক। নিম্নলিখিত হলো কিছু প্রধান খেজুরের প্রকার:
মেজুল খেজুর (Medjool Dates): এই প্রকারের খেজুর সবচেয়ে বড় এবং মিষ্টি হয়। এদের পরিচিতি সবচেয়ে বেশী, এবং তারা মোটা এবং রং গাঢ় লাল হতে পারে। এই ধরনের খেজুর সাধারণত উদ্ভিদের এবং মধুর স্বাদের হয়।
ডেগলেট খেজুর (Deglet Noor Dates): এই খেজুরগুলি অনেক স্বাদিষ্ট এবং ধারে অনেকটা একধরনের একটি পরিপূর্ণ সুস্বাদু খেজুর। তারা সাধারণত সাদা বা পানিতে পরিষ্কার রং হয়।
বারহি খেজুর (Barhi Dates): এই ধরনের খেজুরগুলি সাধারণত সংখ্যক রং এবং আকারে হতে পারে, কিন্তু তারা সাধারণত সাদা বা হালকা কালো হয়ে থাকে। এই খেজুরের স্বাদ খুবই মিষ্টি এবং ক্রিমি হতে পারে।
বরেই খেজুর (Barhi Dates): এই ধরনের খেজুর সাধারণত গাঢ় মধুর স্বাদ এবং মধুর গন্ধের হয়। তারা সাধারণত খুবই মোটা হয় এবং আকারে পোড়া হতে পারে।
খলাসি খেজুর (Khalas Dates): এই ধরনের খেজুর খুবই সাদা হতে পারে এবং গ্লেজড ফলের মত দেখতে পারে। এদের স্বাদ মুখে অনেকটা মধুর এবং ক্রিমি হয়ে থাকে।
মাজ্লুল খেজুর (Mazafati Dates): এই ধরনের খেজুর সাধারণত পানিতে ভিজে থাকে এবং এটির গান্ধ অনেকটা খেজুর গাছের সাথে মিল হতে পারে। এদের মধুর স্বাদ এবং বিশেষ আরোগ্যকর গুণগুলি থাকে।
খেজুরের গুণাবলীঃ
- খেজুর মিষ্টি এবং শক্তিশালী খাদ্য সম্পর্কিত। এটি শক্তিশালী প্রতিশত সহারা, ভিটামিন, মিনারেল, গ্যালকোজ, প্রোটিন এবং পুষ্টিগুলি সরবরাহ করে।
- খেজুর কোলেস্টেরল ও ত্রিগ্লিসেরাইড নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়।
- এটি প্রকৃত বিটামিন, খনিজ এবং আন্টিঅক্সিডেন্টগুলির একটি অমূল্য উৎস।
- খেজুর ক্যালোরি উচ্চ হওয়ায় এটি খাদ্যের পরিমাণ এবং পুষ্টি সরবরাহ করে এবং ত্বক, চুল এবং নখার জন্য ভালো।
- খেজুর হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার এবং অনেক অন্যান্য সমস্যায় রোগীদের জন্য ভালো।
নিচের পোস্টগুলো দেখতে পারেনঃ
খেজুরের উপকারিতাঃ
খেজুরের অনেক ধরনের উপকারিতা রয়েছে। এই ফলের উপকারিতা নিম্নলিখিত অংশে তালিকাভুক্ত করা হলো:
পুষ্টি সরবরাহ: খেজুরে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং প্রাচীন কার্বোহাইড্রেট সহজেই পাওয়া যায়। এই সকল উপাদান মিলে খেজুর একটি পুষ্টিকর খাদ্য হিসাবে পরিচিত।
হৃদরোগ প্রতিরোধ: খেজুরে প্রচুর পরিমাণে প্রাকৃতিক আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা কোলেস্টেরলের উন্নতি এবং হৃদরোগের ঝুঁকিকে কমিয়ে আনতে সহায়ক।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: খেজুরে হাই ফাইবার ও ন্যাটুরাল সুগার আছে, যা প্রতিদিন খাওয়া ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ত্বকের যত্ন: খেজুরের অম্ল, ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি ত্বকের জন্য ভালো। এটি চর্ম পরিষ্কার এবং ত্বকের অবনমন্ধনে সাহায্য করতে পারে।
হেমোগ্লোবিন স্তর উন্নতি: খেজুর আয়রনের অমূল্য উৎস হিসাবে পরিচিত, যা হেমোগ্লোবিন উন্নতি করে এবং এনেমিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে।
পেটের স্বাস্থ্য: খেজুরে প্রাচুর্য প্রিবাইোটিক এবং ফাইবার থাকায়, এটি পেটের স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে এবং পেটের পদার্থ প্রস্থ করে।
হাড় এবং দাঁতের জন্য উপকারিতা: খেজুরে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম অধিক পরিমাণে থাকে, যা হাড় এবং দাঁতের জন্য ভালো।
শরীরের প্রোটিন পরিমাণ উন্নতি: খেজুরে প্রোটিনের অমূল্য প্রতিশত পরিমাণে থাকে, যা শরীরের প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
খেজুরের অপকারিতাঃ
অতিরিক্ত কোন খাদ্যই শরীরের জন্য ভালো নয়। এজন্য খেজুরেরও অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে বিভিন্ন ক্ষতি হয়ে থাকে।
গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স বৃদ্ধি: খেজুরে প্রাকৃতিক মিষ্টি থাকায় এর গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স বেশি হতে পারে, যা ডায়াবেটিস বা মেটাবলিক সিন্ড্রোম রোগীদের জন্য অপকারিতা হতে পারে।
অতিরিক্ত মোটা ও ক্যালরি: খেজুর মোটা ও ক্যালরি ধরে রাখতে পারে এবং অতিরিক্ত খাওয়া হলে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে।
শুষ্কতা এবং পাচ্যত্বে সমস্যা: খেজুরের অতিরিক্ত খাবার অথবা নিয়মিত খেলে শুষ্কতা এবং পাচ্যত্বে সমস্যা হতে পারে।
সার্কোসিনোফ্রেনিয়া: কিছু মানুষ খেজুরের প্রতি অ্যালার্জির অনুভব করতে পারে এবং এর জন্য সার্কোসিনোফ্রেনিয়া হতে পারে।
মেটাবলিক সিন্ড্রোম: অতিরিক্ত খেজুর খাওয়া হলে কিছু মানুষ মেটাবলিক সিন্ড্রোমের ঝুঁকিতে পরিপূর্ণ হতে পারে, যা হার্ট রোগ, ডায়াবেটিস, ওবেসিটি এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সাথে সম্পর্কিত।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: খেজুরে বেশি মিষ্টি ও উচ্চ কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ রয়েছে, যা ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ক্ষতির কারন হতে পারে।
এগুলি হলো কিছু মৌলিক অপকারিতা যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি খেজুর খেয়ে থাকলে হয়ে থাকে।
Leave a Reply