মানসিক শান্তি সকল মানুষের জন্য একটি অমূল্য সম্পদ। এটা ছাড়া জীবনের সবকিছুই অর্থহীন। যদি আপনার মনে শান্তি না থাকে, তাহলে আপনি এই পৃথিবীর কোন কিছুতেই সুখী এবং আনন্দিত হতে পারবেন না। আপনার যত টাকাই থাকুক না কেন। অন্যদিকে, যদি আপনার মনে প্রশান্তি থাকে তবে আপনি কুঁড়েঘরেও সুখে থাকতে পারবেন। মনের শান্তি এমন একটি মূল্যবান সম্পদ যার জন্য মানুষের সর্বদা চেষ্টা করা উচিত এবং সর্বদা এই মূল্যবান সম্পদ রক্ষা করা উচিত। এটি এমন একটি ধন যা আপনাকে খুব ভাগ্যবান এবং শক্তিশালী করে তোলে।
মনের শান্তি চাইলেই কেনা যায় না। এটি হচ্ছে অমূল্য সম্পদ। এটা সত্য যে টাকা দিয়ে অনেক কিছু কেনা যায় কিন্তু টাকা দিয়ে তৃপ্তি ও মানসিক শান্তি কেনা যায় না। এটি এমন কিছু যা আমাদের নিজেদের মধ্যে বিকাশ এবং আত্মস্থ করতে হবে। আজ পৃথিবীতে এমন লোকের অভাব নেই যাদের অগাধ ধন-সম্পদ আছে তবুও তাদের মনের শান্তি নেই বলে নিজেদেরকে গরীব মনে করে।
সফল হতে হলে মানসিক প্রশান্তি থাকা খুবই জরুরী। অস্থির ও উদ্বিগ্ন মন থেকে কোনো ভালো ফল আশা করা যায় না। একটি বিচলিত মন কোনো কাজে সঠিকভাবে মনোনিবেশ করতে পারে না, যার কারণে কোনো কাজই তার সর্বোত্তম লক্ষ্য অর্জন করতে পারে না। মানসিক চাপ এবং খুশি উভয় অবস্থায় কাজটি পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করুন। যে কাজটি সম্পূর্ণ শান্তির সাথে খুশি মেজাজে করা হয়, তার গুনাগুণ আলাদা।
মানসিক অশান্তির প্রধান কারণ হল মানসিক চাপ। আপনার মনে যতক্ষণ কোন কিছুর চাপ থাকবে, ততক্ষণ আপনার মনের শান্তিও নষ্ট হবে। মানসিক চাপ আমাদের সবাইকেই কমবেশি ভূগিয়ে থাকে। ব্যক্তিগত ও সামাজিক হুমকি, চাকরি-বাকরি, ব্যস্ততা, অসুখ-বিসুখ সবকিছু মিলিয়ে এই মানসিক চাপ আমাদের স্বাস্থ্য ও ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। ফলশ্রুতিতে, জীবন হয়ে ওঠে দুর্বিষহ। ছোটো-খাটো বিষয়ে হতাশা এসে একসময় মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে জীবনের পরতে পরতে! ছোট্ট এই জীবনটাকে উপভোগ করার আগেই বিষাদে ছেয়ে যায় মন।
মানসিক শান্তির জন্য কি কি করা প্রয়োজন?
ধ্যানঃ
প্রাচীনকাল থেকেই মানসিক শান্তির জন্য ধ্যান এবং যোগ ব্যায়াম সবচেয়ে ভালো উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ১০ মিনিট ধ্যানের মাধ্যমে সারাদিনের ক্লান্তি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। তাই মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন কিছুটা সময় বের করে ধ্যান করা যেতে পারে।
শরীরচর্চাঃ
শরীরচর্চা বা ব্যায়াম বাড়তি ওজন কমানোর পাশাপাশি মানসিক অবস্থার উন্নতিতেও সহায়তা করে। শরীরচর্চার মাধ্যমে মস্তিষ্কের ডোপামিন ও সেরোটোনিন নামক রাসায়নিক উপাদান নিঃসৃত হয় যা মানসিক অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে এবং মনে প্রশান্তি আনে। এমনকি প্রতিদিন ১৫ মিনিট ব্যায়াম মাদক থেকে বিরত থাকাতে সহায়তা করে।
পছন্দের কাজ করাঃ
মন অন্যদিকে ব্যস্ত রাখতে আপনার পছন্দের কাজ করুন। যেমন, গান শোনা, ছবি দেখা, বই পড়া, বাগান করা ইত্যাদি। এ ধরনের কাজে প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সময় ব্যয় করা উচিত। প্রতিদিন পছন্দের কাজ করে খুব সহজেই মানসিক অবসাদ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। মনে প্রশান্তি পাওয়ার জন্য বাড়তি মানসিক চাপ না বাড়িয়ে যে কাজগুলো করে আনন্দ পাওয়া যায় সেগুলোই করা উচিত।
প্রকৃতি উপভোগ করুনঃ
মন ভালো রাখার বিশেষ একটি মাধ্যম হল ঘুরতে যাওয়া। প্রকৃতির সৌন্দর্য আপনার মনকে শান্ত করে তুলবে। আপনি উপভোগ করবেন অন্য ধরনের আনন্দ।
একা থাকবেন নাঃ
মনে চাপ নিয়ে কখনো একা থাকবেন না। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিন, খেলাধুলায় অংশ নিন। আপনার সমস্যার কথা শেয়ার করুন। এতে মন হালকা হবে।
ইতিবাচক হোনঃ
অধিকাংশ মানসিক চাপই আসলে আপনার অনুধাবনের উপর নির্ভর করে। একটু পেছনে ফিরে তাকান এবং ভাবুন, সত্যিই যা নিয়ে আপনি উদ্বিগ্ন, তা নিয়ে খুব চিন্তা করার দরকার আছে কি? শুধুমাত্র আপনার দৃষ্টিভঙ্গির একটু পরিবর্তনই আপনাকে যেকোনো সমস্যাকে একটি ইতিবাচক কোণ থেকে দেখতে সাহায্য করবে।
নিশ্চিন্তে ঘুমানঃ
মানসিক চাপের জন্য রাতে ঘুম আসেনা? মানসিক চাপের একটি অন্যতম পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া হল ইন্সোমনিয়া, এটি মানসিক চাপকে আরও বাড়িয়ে তোলে এবং শরীরকে ক্লান্ত ও মেজাজকে খিটখিটে করে তোলে। তাই রাতে ফ্রেশ ঘুম দেওয়ার চেষ্টা করুন।
পুষ্টিকর খাবার খানঃ
ইতোমধ্যে এটি প্রমাণিত যে, জাঙ্ক ফুড আমাদের মনের বিষাদ বাড়িয়ে দেয় (মেদবহুলতার কথাতো বলাই বাহুল্য)। কাজেই খাদ্যাভ্যাসে একটু পরিবর্তন নিয়ে আসুন। আমিষ ও শস্যজাতীয় খাবার আমাদের শক্তি বাড়ায় এবং মানসিকতায় তা পরিবর্তন আনতেও সচেষ্ট। বিজ্ঞানীদের মতে, কাঠবাদাম, সামুদ্রিক মাছ, শাকসবজির মত খাবার মানসিক চাপ দূর করায় ভূমিকা রাখে। তাছাড়া মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের সুষম বিকাশে ভিটামিন বি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাছাড়া এটি শিথিলায়নেও ভূমিকা রাখে। ভিটামিন বি এর অভাবে খিটখিটে মেজাজ ও বিষাদ বাড়ে। কাজেই ভিটামিন বি গ্রহণ করুন। সাধারণত শিম, মটরশুঁটি, বাদাম, কলিজা, ডিম ও দুধে প্রচুর ভিটামিন বি থাকে।
এই দুইটি পোস্ট দেখতে পারেন –
ফাস্টফুড বা জাঙ্ক ফুডের ক্ষতিকর দিক
পুষ্টিকর খাবার তালিকা ও এর প্রয়োজনীয়তা
ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের ব্যবহার কমিয়ে দিনঃ
ইন্টারনেট/ওয়াইফাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করুন। মানসিক চাপ কমাতে না পারার একটি বড় কারণ হচ্ছে ইন্টারনেট ও ফোন থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে না পারা। ইন্টারনেট ও মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে অন্তত এমন কিছু বিষয় থেকে দূরে থাকা যায়, যা আমাদেরকে বিষাদগ্রস্ত করে তোলে। আর তাছাড়া নিজের মূল্যবান সময়গুলোকেও উপভোগ করা যায় নিজের মত করে।
সংগৃহীত
Leave a Reply