রক্তদান এমন একটি ব্যাপার, যা জাতি, ধর্ম, বর্ণের ভেদাভেদ ভুলিয়ে সম্প্রীতির বার্তা বয়ে চলে। হাসি ফোটায় মৃত্যু পথযাত্রীর ঠোঁটের কোণে। প্রতিবছর বিশ্বে গড়ে প্রায় ১১৮ মিলিয়ন ইউনিট রক্তের প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশে রক্তের চাহিদা বছরে ৬ লক্ষ ব্যাগ। রক্তের প্রয়োজন প্রতিদিন বাড়ছে। আগে মানুষ রক্তের অভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরতো। এখন রক্তদাতা তৈরি হচ্ছে। হাজার হাজার ব্লাড সংস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।
রক্তের গ্রুপ কীভাবে এলো?
রক্তের গ্রুপ হল রক্তের লোহিত কণিকায় অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি। এটি বংশগতভাবে নির্দিষ্ট করা থাকে। অ্যান্টিজেনের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে রক্তের বিভিন্ন ধরনের গ্রুপিং সিস্টেম করা হয়েছে। রক্ত গ্রুপিং (Blood Grouping) পদ্ধতি প্রথম আবিষ্কার করেন অস্ট্রিয়ান শরীরতত্ত্ববিদ কার্ল ল্যান্ডস্টেইনার। তখন তিনি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজিকাল-অ্যানাটমিক্যাল ইনস্টিটিউটে কর্মরত ছিলেন।
রক্তের গ্রুপ কয়টি ও কি কি?
মানুষের রক্তে রয়েছে আটটি ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপ। সেগুলো হলো –
এ পজেটিভ (A+ Positive)
এ নেগেটিভ (A- Negative)
বি পজেটিভ (B+ Positive)
বি নেগেটিভ (B- Negative)
এবি পজেটিভ (AB+ Positive)
এবি নেগেটিভ (AB- Negative)
ও পজেটিভ (O+ Positive)
ও নেগেটিভ (O- Negative)
রক্তের গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন হয় কেন?
এক গ্রুপের রক্তের সঙ্গে অন্য গ্রুপের রক্ত মেশানো খুবই বিপজ্জনক। ঊনবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত বহু মানুষ মৃত্যুবরণ করেন শুধুমাত্র ভিন্ন গ্রুপের রক্ত শরীরে প্রবেশ করানোর জন্য। কারণ, রক্তের গ্রুপিং আবিষ্কৃতই যে হয়েছে ১১৬ বছর আগে। এর আগে চিকিৎসকদের কোনো ধারণা ছিলো না যে একই গ্রুপের ব্যক্তি একজন আরেকজনকে রক্ত দিতে পারে!
মানুষের রক্তের গ্রুপ কোনটি হবে তা নির্ধারণ করে প্রত্যেকের রক্তের লোহিত রক্তকণিকা বা রেড ব্লাড সেলের প্রাচীরে থাকা এন্টিজেন নামক এক ধরণের প্রোটিন। উদাহরণস্বরূ, টাইপ ‘এ’ রক্তে থাকে টাইপ ‘এ’ এন্টিজেন, অন্যদিকে টাইপ ‘বি’ রক্তের লোহিত রক্ত কণিকা বহন করে টাইপ ‘বি’ এন্টিজেন। এখন এই দুই টাইপের রক্ত যদি একই ব্যক্তির দেহে মিশ্রিত হয়, একে অন্যের বিরুদ্ধে রীতিমত বিদ্রোহ ঘোষণা করে! রক্তের প্লাজমা বা রক্তরসে থাকে নানা ধরনের অ্যান্টিবডি, যাদের কাজ হলো দেহের সঙ্গে সামাঞ্জস্যপূর্ণ নয় এমন সব রাসায়নিক প্রবেশে বাঁধা দেয়া। এমনকি যেসব এন্টিজেন আমাদের দেহের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, এন্টিবডিগুলোর কাজ হচ্ছে সেগুলোকে ধ্বংস করে দেয়া। বিপত্তিটা মূলত এখানেই। যখন ভুল এন্টিজেনবাহী রক্ত মানবদেহে প্রবেশ করানো হয়, রক্তের প্লাজমায় অবস্থানকারী এন্টিবডিগুলো সেই এন্টিজেনের সঙ্গে লেগে যায়, রক্তকে জমাট বাঁধিয়ে ফেলে। ফলে, রক্তনালী দিয়ে রক্ত প্রবাহ ব্যহত হয় এবং একটি ভয়াবহ ঝুঁকির ব্যাপার। আবার, ভুল গ্রুপের সামান্য কয়েক মিলিলিটার রক্তই সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে। এ কারণে যার যার নিজের রক্তের গ্রুপ জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ভূল গ্রুপের রক্ত দিলে রক্ত গ্রহীতার কি কি সমস্যা হতে পারে?
ভূল গ্রুপের রক্ত যদি কাউকে দেওয়া হয় তাহলে ঐ রক্ত গ্রহনকারীর নিম্ন সমস্যাগুলো হতে পারে। যথা –
অস্থির লাগা, দুশ্চিন্তা, মাথা ব্যথা, বুকে ভার ভার লাগা, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, গায়ে চুলকানি, শরীর সাদা হয়ে যাওয়া, ব্লাড প্রেশার কমে যাওয়া, জন্ডিস, প্রস্রাব কমে যাওয়া, কিডনি নষ্ট হওয়া এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।
তাই রক্ত দেওয়ার পূর্বে অবশ্যই যাবতীয় টেষ্ট করে, ভালো করে যাচাই করে রোগীকে রক্ত দিবেন। আর যদি রক্ত দেবার সময় রোগীর কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে আগে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে চিকিৎসক কে ডাকতে হবে। চিকিৎসক রোগীর বয়স, ওজন ও শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
কারা রক্ত দিবেন, কারা দিবেন না, রক্তদানের উপকারীতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে “রক্ত দিন, জীবন বাঁচান…” এই পোস্টটি দেখতে পারেন।
কিছু প্রশ্ন-উত্তর জেনে নেওয়া যাকঃ
প্রশ্নঃ রক্ত কণিকা কত প্রকার?
উত্তরঃ তিন প্রকার।
কোন রক্ত গ্রুপ কে সর্বজনীন দাতা বলে ?
উত্তরঃ অ (O+) পজেটিভ
প্রশ্নঃ আপনি যদি 250 ml রক্তদান করেন তাহলে আপনার শরীরের মোট রক্তের শতকরা কত ভাগ রক্ত নেয়া হবে?
উত্তরঃ ৫% নেওয়া হবে।
প্রশ্নঃ আমাদের শরীরের কোনো স্থানে কেটে গেলে রক্তের কোন উপাদানটি রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে?
উত্তরঃ ফাইব্রিনোজেন।
প্রশ্নঃ রক্ত শূন্যতার অপর নাম কি?
উত্তরঃ অ্যানিমিয়া।
রক্তশূন্যতা বা Anemia নিয়ে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন।
সংগৃহীত
Leave a Reply