চা আমাদের সব থেকে প্রিয় পানীয়। চা খেতে কে না পছন্দ করেন? ঘুম থেকে উঠে এক কাপ গরম চা না খেলে যেন ঘুমটাই কাটতে চায় না। কিংবা বৃষ্টি আর গরম গরম পকোড়ার সঙ্গে এক কাপ গরম চা আমেজটাই বদলে দেয়। শুধু কি তাই? বিকেল সন্ধ্যার নাস্তা, মেহমান আপ্যায়নের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে চা অন্যতম। এছাড়াও যখন তখন চা-ই অন্যতম পানীয়। কেউ লিকার চা খেতে পছন্দ করেন তো কেউ আদা দেওয়া, তুলসী দেওয়া চা। আবার অনেকেই কফি খেতে প্রচুর ভালোবাসেন। এই পছন্দের চা কফিতে যে কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, তা আমাদের মাথাতেই আসে না। শুনলে অবাক হবেন, চা ও কফিরও রয়েছে বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।
কেউ বলে চা-কফি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আবার কেউবা করে কড়া মানা। মনে তাই প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক চা-কফি পান করলে কি আসলেই ক্ষতি হয়? আমরা প্রথমে চা-কফির কিছু উপকারীতা জেনে নেই।
চায়ের উপকারীতাঃ
এক কাপ চা তে আছে প্রায় ১৪ থেকে ১৭ গ্রাম ক্যাফিন। মুড বুস্ট করতে সাহায্য করে এই উপাদানটি। এ জন্য চা পানের পর দেহ-মন চাঙা হয়ে উঠে। এক ধরনের সতেজতা অনুভব হয়। একাধিক উপকারী উপাদানের উৎস এই পানীয়টি। হার্টের জন্য চা উপকারি। নিয়মিত চা পানের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের মতো শারীরিক সমস্যাও এড়ানো যায়। রং চা রোগ প্রতিরোধ শক্তি অনেকটা বাড়িয়ে দেয়। গ্রিন টি’রও রয়েছে বেশ উপকারীতা।
জেনে নিন – “গ্রিন টি – সবুজ চায়ের উপকারিতা”
কফির উপকারীতাঃ
কফিও কোনো অংশে চায়ের চেয়ে কম উপকারি নয়। প্রতি ১ কাপ কফিতে প্রায় ৯৫ থেকে ২০০ মিলিগ্রাম ক্যাফিন থাকে। এটি উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা রোধে কাজ করে। নিয়মিত কফি পানে হার্ট সংক্রান্ত অসুখ থেকে শুরু করে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, গলস্টোন, পার্কিনসনস ডিজিজের মতো অসুখের আশঙ্কা কমে যায়। এ জন্য কফি পান করা যেতে পারে।
চা আর কফি দুটোই আসলে শরীরের জন্য উপকারী। তাই বলে যখন তখন ইচ্ছেমতো, অতিরিক্ত এই পানীয় পান করা যাবে না। তাহলে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতিও হতে পারে।
এখন জানা যাক, অতিরিক্ত চা-কফি পানের ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে।
চা কফির ক্ষতিকর দিকঃ
অফিসে, বন্ধুদের সাথে আড্ডায়,পরিবারের সাথে,বই পড়ার ফাঁকে, অবসরে এক কাপ চা নতুন করে প্রাণ ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু অতিরিক্তি চা খেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
চায়ের মধ্যে পাওয়া ট্যানিন প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করলে শরীরের আয়রন শুষে নেওয়ার ক্ষমতা কমায়।
অতিরিক্ত চা খাওয়া কিছু অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা হ্রাস করতে পারে।
চা এমনিতে মাথা ব্যাথা কমালেও অতিরিক্ত চা পান করলে মাথা ঘোরাতে পারে। দিনে ৪০০-৫০০ মিলিগ্রামেরও বেশি ক্যাফেইন গ্রহণ করলে এমন হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
গর্ভাবস্থায় বেশি পরিমাণে চা খাওয়া ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। কারণ, চায়ে থাকা ক্যাফেইন গর্ভস্থ শিশুর জন্য ক্ষতিকারক হিসেবে ধরা হয়। গর্ভবতী মহিলাদের ২০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যাফেইন খাওয়া উচিত নয়।
অত্যধিক চা পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়তে পারে।
সাধারণত, ক্যাফেইন গ্রহণে দেহের ক্লন্তিভাব কমে। তবে অতিরিক্ত গ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে অতিরিক্ত চিনি মেশানো হলে।
ঘুমের সমস্যা হতে পারে। রাতে ক্যাফেইন গ্রহণ ঘুমের সমস্যা করে এবং পরবর্তি সময়ে মানসিক দুর্বলতা-সহ নানান সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণের ফলে দেহে নানান রকমের সমস্যা দেখা দেয়, যেমন – মাথা ব্যথা, ঝাঁকুনি এমনকি হৃদগতি বেড়ে যেতে পারে।
রাতের বা দুপুরের যে সময়েই হোক না কেন, ভারী খাবার খাওয়ার পর চা এবং কফি পান খুবই ক্ষতিকর। উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণের ঠিক পর পরই চা বা কফি পান করা একেবারেই উচিত নয়। এতে হজমে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য, হৃদরোগ এমনকি প্রস্টেট ক্যান্সার বা মূত্রথলির ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে অতিরিক্ত চা পানে।
কফির প্রতি আসক্তি থাকলে একসময় দুশ্চিন্তা, বিরক্তিভাব, রাগ, নিদ্রাহীনতা, জড়তা, প্যানিক অ্যাটাকের মত মানসিক জটিলতার কারণ হতে পারে।
চা বা কফি পানের পর পানি পান করলে তা বদহজম ও লুজ মোশনের মতো সমস্যার কারণ হতে পারে। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে ঠান্ডা লাগার মতো সমস্যা। এই অভ্যাস দাঁতের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
পরিশেষে এটাই বলা যায়। যতটুকু সম্ভব দুধ চা, কফি এড়িয়ে চলুন। দিনে ৩ কাপের বেশী যেন না হয়। রং চা বা গ্রিন টি খাওয়ার অভ্যাস করুন। এতে আপনার শরীর স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে। জেনে নিন – “গ্রিন টি – সবুজ চায়ের উপকারিতা”
যেহেতু অতিরিক্ত চা-কফি পান করে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর তাই এই অভ্যাসের লাগাম টানাই জরুরী। এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে বেশি করে পানি পান করুন। দিনে অন্তত ২-৩ লিটার পানি পানের অভ্যাস তৈরী করুন। জেনে নিন – “শরীরে পানির প্রয়োজনীতা সম্পর্কে”
সংগৃহীত
Leave a Reply