পুষ্টিকর খাবার তালিকা ও এর প্রয়োজনীয়তা

nutritious, food, healthy, vitamin, health

স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। আমরা যা গ্রহণ করি তাই খাদ্য তবে শুধু খাবার গ্রহণনের মাধ্যমেই সুস্থ থাকা সম্ভব নয়, সুস্থ থাকতে প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবার। যদি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক না থাকে তবে খাবার গ্রহণ করে কোন উপকার হয়না বরং ক্ষতি হয়। কেননা আমরা সবাই জানি অধিক মাত্রায় খাবার গ্রহণ শরীরের জন্য কতটা খারাপ। তাই আমাদের সকলের উচিত দৈনন্দিন জীবনের সঠিক খাবার গ্রহণ করা যার মধ্যে শর্করা আমিষ ও খনিজ পদার্থগুলো পরিপূর্ণ থাকে যা আমাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অপরিসীম।

খাদ্য ছাড়া আমাদের জীবনধারণ সম্ভব নয়। দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম ও চলাফেরা করার জন্য দরকার সবল, রোগমুক্ত ও সুস্থ শরীর। আর এই শরীর বজায় রাখতে খাবার প্রয়োজন। খাদ্য আমাদের শরীর গঠন, বৃদ্ধি সাধন এবং ক্ষয়পূরণ করার পাশাপাশি তাপশক্তি ও কর্মক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে। অসুস্থ শরীরকে আরোগ্য হতেও সহায়তা করে। তবে খাবারে রয়েছে অনেক শ্রেনীবিভাগ। আর দেহকে সুস্থ রাখতে কোন খাবার কতটুকু শরীরের জন্য দরকার, সেটিও জানা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

সুষম খাদ্য পিরামিডের ৫টি স্তর রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দুটি স্তর দখল করে আছে শর্করা, শাকসবজি ও ফলমূলজাতীয় খাবার। পিরামিডের নিচু স্তরে শর্করাজাতীয় খাদ্য। এর ওপরের স্তরে শাকসবজি ও ফলমূলজাতীয় খাবার। তার ওপরের স্তরে রয়েছে আমিষ জাতীয় খাবার। চতুর্থ স্তরে রয়েছে দুগ্ধজাতীয় খাদ্য এবং পঞ্চম স্তরে রয়েছে স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।

দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকাঃ

পুষ্টিকর খাবার বলতে আমরা এক কথায় বুঝি, যে খাবারের ফলে আমাদের শরীর সুস্থ সবল এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয় তা-ই হলো পুষ্টিকর খাবার। যদি আমরা ফলের কথা চিন্তা করি যেমন মনে করুন-

আপেলঃ আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং ভিটামিন সি থাকে তাছাড়া অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর।

কমলাঃ সুপরিচিত এবং সুস্বাদু ফল হিসেবে কমলা অতুলনীয় কমলার রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি।

ডিমঃ প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ হচ্ছে ডিম।

মুরগির মাংসঃ প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ। যারা মোটাতাজা হতে চান তারা অবশ্যই মুরগির মাংস খেতে পারেন এতে আমিষের চাহিদা পূরণ হবে।

দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের তালিকায় আমাদের কিছু ভাল খাবারের উৎসের প্রয়োজন রয়েছে।

খাদ্য পিরামিডঃ

শর্করাঃ

মানুষের প্রধান খাদ্য শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট। কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন নিয়ে শর্করা তৈরি হয়। শর্করা বর্ণহীন, গন্ধহীন এবং অল্প মিষ্টি স্বাদযুক্ত। মানুষের শরীরে কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে শর্করা। সাধারণত ভাত, রুটি, মুড়ি, খই, চিড়া, ওটস, আলু, নুডলস ও পাস্তা শর্করার প্রধান উৎস। প্রতিদিন ৬-১১ সার্ভিংস শর্করাজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। শর্করাজাতীয় খাবারের মধ্যে জটিল শর্করা, যেমন গমের আটার রুটি, লাল চাল, ওটস—এগুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে। গরু, ছাগল ও অন্যান্য প্রাণীর দুধে এই শর্করা থাকে।

ভিটামিন ও খনিজ লবণঃ

সাধারণত শাকসবজি ও ফলমূল ভিটামিন ও খনিজ লবণের প্রধান উৎস। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে এই দুটি খুবই জরুরি। দৈনিক ৩-৫ শতাংশ শাকসবজি এবং ২-৪ শতাংশ ফলমূল গ্রহণ করা উচিত। খাবার তালিকায় গাঢ় সবুজ শাকসবজি, হলুদ ফলমূল, দেশীয় ফলকে প্রাধান্য দিতে হবে।

আমিষঃ

উৎস অনুযায়ী আমিষকেকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। প্রাণিজ আমিষ ও উদ্ভিজ্জ আমিষ।

যে আমিষগুলো প্রাণিজগৎ থেকে পাওয়া যায় তাদেরকে প্রাণিজ আমিষ বলে। যেমন – মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি। এই প্রোটিনকে প্রথম শ্রেণির প্রোটিন বলে।

আর উদ্ভিদ জগৎ থেকে প্রাপ্ত আমিষকে উদ্ভিজ্জ আমিষ বলে। যেমন – ডাল, বাদাম, সয়াবিন, শিমের বিচি ইত্যাদি। উদ্ভিজ্জ আমিষকে দ্বিতীয় শ্রেণির আমিষ বলে।

দুধ ও দুধজাতীয় খাবারঃ

দুধ, দই, ছানা, পনির দেহের ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও আমিষের চাহিদা পূরণ করে। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে দৈনিক ২-৩ শতাংশ দুধ বা দুধজাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত।

স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবারঃ

তেল, ঘি, মাখন, মিষ্টি এগুলো এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। দৈনিক সামান্য পরিমাণে স্নেহ বা চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে হেলদি ফ্যাট, যেমন – অলিভ, ক্যানোলা, সানফ্লাওয়ার বা বাদামের তেলকে প্রাধান্য দিতে হবে।

এ ছাড়া দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। শরীরে পানির প্রয়োজনীতা জানতে এই পোস্টটি দেখতে পারেন। “শরীরে পানির প্রয়োজনীতা”

দৈনিক পুষ্টি চাহিদা অনুযায়ী কতটুকু খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন?

একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির পুষ্টি চাহিদা তার দৈনিক পরিশ্রম ও দেহের ওজনের উপর নির্ভর করে। খাবার পুষ্টিকর করার জন্য মোট ক্যালরির ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ বিভিন্ন প্রকার কার্বোহাইড্রেট থেকে, ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ স্নেহ পদার্থ থেকে এবং ১৫ থেকে ২০ শতাংশ প্রোটিন থেকে গ্রহণ করা উচিত।

মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য কেবল ভাত-মাছ হলেই যথেষ্ট নয়। এর সাথে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের খাদ্য তালিকায় দুধ ও দুধ জাতীয় খাবার দৈনিক ১৫০ থেকে ৪৫০ মিলি, ফলমূল ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম এবং চিনি ১৫ থেকে ২৫ গ্রাম থাকতে হবে।

ওজনের ভিত্তিতে কজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির দুপুরের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণের অনুপাতঃ

এ পদ্ধতিতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির দুপুরের খাবারের সাথে ৪০০ গ্রাম ভাত (৫৩%), ২০০ গ্রাম মিশ্রিত সবজি (১৫%), ৫০ গ্রাম মাছ, মাংস, ডিম (৬%), ১০০ গ্রাম শাক (১৫%), ২০ গ্রাম ডাল (৪%) এবং ৫০ গ্রাম মৌসুমী ফল (৭%) থাকতে হবে।

সংগৃহীত