শরীরে পানির প্রয়োজনীতা

benefit of water, pani

“পানির অপর নাম জীবন” লাইনটা অনেকেরই জানা আছে। তবে, সেটি হতে হবে বিশুদ্ধ পানি। শুধু পিপাসা মিটানো পর্যন্তই কেবলমাত্র পানির উপকারিতা সীমাবদ্ধ নয়। পরিমিত পরিমাণে পানি পান করা আপনার শরীরকে বিভিন্ন ধরনের অসুখের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। আপনার ত্বককে করে তুলতে পারে উজ্জ্বল। আজকের ব্যস্ত জীবনে নিজের ত্বক ও শরীরের যত্ন নেওয়ার একটুও সময় নেই আপনার হাতে। কিন্তু পরিমানমত পানি খান আপনার শরীর থাকবে শান্ত এবং রক্ষা পাবেন বহু অসুখ থেকে।

শরীরে তিন ভাগের দুই ভাগ ওজনের জন্য পানি প্রয়োজন। মস্তিষ্ক ও পেশির তিন কোয়ার্টারই পানির তৈরি। এমনকি হাড়ের শতকরা ২০ ভাগ পানি। শারীরিক গঠন, বয়স এবং লিঙ্গের উপর ভিত্তি করে প্রতিটি মানুষের শরীরে পানির পরিমাণ ভিন্ন হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মহিলাদের তুলনায় পুরুষের শরীরে পানির পরিমাণ বেশি থাকে। কারণ, তাদের শরীরে চর্বিবিহীন পেশির পরিমাণ বেশি থাকে। পেশি চর্বির তুলনায় পানিই বেশি ধরে রাখে। প্রতিটি কোষ থেকে শুরু করে সারকুলেশন সিস্টেম শরীরের প্রত্যেকটি অংশের কাজ পানির ওপর নির্ভর করে।

ভালো থাকার এবং রোগ প্রতিরোধ করার জন্য মানুষের শরীরে প্রতিদিন পানির প্রয়োজন হয়। খাবার ছাড়া এক সপ্তাহ থাকা সম্ভব হলেও পানি ছাড়া এত দিন থাকা সম্ভব নয়। শরীর সচল রাখা ও শারীরিক ফিটনেস অর্জনে খাদ্যতালিকায় প্রচুর পানি থাকতেই হবে। সারা দিন আমরা যত ধরনের খাবার খাই, তার মধ্যে একমাত্র পানিই ক্যালরি, চর্বি, শর্করা ও চিনিমুক্ত।

নিয়মিত পানি পান স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং কোষ সঠিকভাবে পরিচালিত হয় পানির মাধ্যমে। শরীর সুস্থ রাখতে একজন মানুষের প্রতিদিন আট থেকে দশ (৮-১০) গ্লাস পানি পান করা প্রয়োজন।

নিয়মিত পানি পান করলে যে সকল উপকার হবেঃ

অতিরিক্ত ওজন বা ফ্যাট বেড়ে যাওয়া নিয়ে এখন মহিলা থেকে পুরুষ সবাই খুব চিন্তায় থাকেন। পরিমিত পানি আপনার শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে দেয় এবং অপ্রয়োজনীয় খিদের হাত থেকে মুক্তি দিবে আপনাকে। পানির মধ্যে যেহেতু ক্যালোরির পরিমান একদম শূন্য তাই আপনার দেহের মেটাবলিসম বাড়াতে সাহায্য করে যা মুক্তি দেয় আপনাকে অতিরিক্ত মেদের হাত থেকে।

মানবশরীরের প্রায় সমস্ত অসুখ হয় ইমিউনিটি ক্ষমতা কম থাকার জন্য। একটু খেয়াল করে দেখবেন কিছু মানুষ ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পড়েন, এর একমাত্র কারণ হল তাদের দেহের ইমিউনিটি ক্ষমতা বা আত্মরক্ষার শক্তি খুবই কম তাই নিজেদের দেহের ইমিউনিটি ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন সঠিক ভাবে পানি পান করুন।

আপনারা প্রত্যেকেই নিশ্চয়ই চান আপনার ত্বক ভাল রাখতে। তাহলে আজ থেকেই পরিমিত পরিমাণ পানি খাওয়া শুরু করে দিন। পানি পান করা শুধু আপনার স্বাস্থ্য না আপনার ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। পানি আপনার ত্বককে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জী বা ব্রণের হাত থেকে প্রতিরোধ করে। পানি হল আপনার ত্বককে উজ্জ্বল করার সব থেকে সস্তা একমাত্র উপায়।

কম্পিউটার বা ল্যাপটপের সামনে বেশিক্ষণ বসে কাজ মানেই স্পন্ডিলাইটিশ থেকে মাথা ব্যথা যে কোন ব্যথা হবেই। এই ব্যথা বেদনাকে খুব একটা আমল না দিলেও বয়সকালে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে এগুলি। তাই সেই পর্যায় যাওয়ার আগেই মুক্তি পান ব্যথার হাত থেকে। এজন্য কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে পানি পান করুন। এই পানিই আপনাকে মুক্তি দেবে ব্যথার প্রকোপ থেকে।

শরীরের যে অঙ্গগুলো সংযুক্ত অবস্থায় থাকে, সেখানে কার্টিলেজের উপস্থিতি থাকে। শারীরিক কাজ সঠিকভাবে সম্পাদনের জন্য কার্টিলেজে ৮০ শতাংশ পানির উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন। দীর্ঘ সময় পানি পান না করলে এই স্থানগুলো শুকিয়ে গিয়ে ব্যথা হতে পারে।

নিয়মিত পানি পান করলে লালাগ্রন্থি শুকিয়ে যায় না বলে সহজে খাবার হজম হয়। পানির কারণে মুখ, নাক, চোখ ভেজা থাকে, যা বিভিন্ন সময় ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে এই অঙ্গগুলোকে। মিষ্টি খাওযার পর পানি পান দাঁতকে ক্ষয় থেকে বাঁচায়।

রক্ত এবং লিস্ফেটিক সিস্টেমের মাধ্যেমে নাইট্রাস এবং অক্সিজেন শরীরের সব অংশে পৌঁছে দেয়। রক্তে পানির পরিমাণ ৯০ শতাংশেরও বেশি। রক্ত শরীরের বিভিন্ন অংশে অক্সিজেন পৌঁছে দেয় অর্থাৎ পানিও শরীরের সব অংশে পৌঁছে যায়।

মস্তিষ্কের গঠন এবং কার্যকারিতায় পানির গুরুত্ব অনেক বেশি। দীর্ঘ সময় পানি পান না করলে স্পাইনাল কর্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

হজম সমস্যা সমাধানে, কোষ্ঠকাঠিন্য, এসিডিক সমস্যায় পানি পান করা জরুরি। পাকস্থলীর আলসার এবং হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা দিতে পারে ডিহাইড্রেশনের কারণে।

শরীরে পানি কম প্রবেশ করলে রক্ত পাতলা হয়ে দেখা দিতে পারে ব্লাড প্রেশার। নিয়মিত পানি পানের ফলে রক্তের স্বাভাবিক চলাচল সাহায্য করে।

কিডনী শরীরের তরল পদার্থ নিয়ন্ত্রণ করে। অপর্যাপ্ত পানির কারণে কিডনিতে পাথর ছাড়াও দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা।

এছাড়াও পানি আমাদের,

শরীরের তাপমাত্রার ভারসাম্য রক্ষা করে।

শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টের স্বাভাবিক নড়াচড়া করতে সাহায্য করে।

শরীরের অভ্যন্তরীণ ক্ষতিকারক উপাদান বের করে দিতে সাহায্য করে।

কখন পানি পান করা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়?

তৃষ্ণা পেলে আমরা পানি পান করি। তবে তৃষ্ণা মেটানো ছাড়াও পানির রয়েছে অনেক কাজ। যেমন এটি আমাদের শরীরে পানির মাত্রা ঠিক রাখে, অতিরিক্ত ক্যালোরি পোড়ায় এবং কমায় ক্ষুধাভাব। তবে কিছু সময় রয়েছে যখন পানি পান করলে ঘটতে পারে হিতে বিপরীত। ভুল সময়ে পানি পান করার আছে আরও অনেক অপকারিতা। তাই কোন সময়ে পানি পান করা উচিত এবং কখন উচিত নয় তা আমাদের সবার জেনে রাখা জরুরি। তাহলে জেনে নেওয়া যাক, কখন পানি করা উচিত নয়ঃ

খাওয়ার সময় বারবার পানি পান করার অভ্যাস আছে অনেকের। কিন্তু এটি মোটেই স্বাস্থ্যকর নয়। কারণ খাবার খাওয়ার মাঝে বেশি পানি পান করা হয়ে গেলে তা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত পানি হজম সহায়ক এনজাইম ও অ্যাসিডের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

আবার, অনেকেই খাবার শেষ করেই প্রচুর পরিমাণে পানি করে থাকেন। এটা শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকর। খাবার খাওয়ার আগে পানি পানের অভ্যাস করুন। তাও খেতে হবে খাবার খাওয়ার অন্তত মিনিট পনেরো আগে। খাবারের মাঝখানে পানি পান করাও বাদ দিতে হবে। তবে খুব তেষ্টা পেলে অল্প পানি পান করা যেতে পারে। কিন্তু বেশি পানি পান করে ফেললে তা নানা অস্বস্তির কারণ হতে পারে।

প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি পান করলে তা আমাদের শরীরে লবণের ভারসম্য নষ্ট করে। ফলে নানা অসুখ দেখা দিতে পারে। তাই আপনার শরীর অনুযায়ী পরিমাণ মত পানি পান করুন।

যারা নিয়মিত শরীরচর্চা/ব্যায়াম করেন, তারাও পানি পান করার সময় কয়েকটা ব্যাপার খেয়াল রাখুন। এক্সারসাইজ শুরুর আগের মুহূর্তে বা শেষ করেই পানি পান করতে যাবেন না। বরং মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নিয়ে প্রয়োজন হলে অল্প করে পানি পান করতে পারেন।

খুব রোদ থেকে এসে সঙ্গে সঙ্গে পানি না পান করাই ভালো। একটু বিশ্রাম নিয়ে তারপর পানি পান করুন।

বাড়িতে থাকলে বোতলের পরিবর্তে গ্লাসে পানি পান করার অভ্যাস করুন। শুয়ে পানি পান করবেন না। সব সময় চেষ্টা করবেন বসে পানি পান করার।

হাঁটাচলা করতে করতে পানি পান না করাই ভালো।

খুব ঠান্ডা পানি কখনই পান করবেন না। এর ফলে গলায় সমস্যা দেখা দিতে পারে।

সংগৃহীত