তুলসী পাতা বা Holy Basil ঐতিহ্যগত আয়ুর্বেদিক ওষুধের একটি জনপ্রিয় ভেষজ উদ্ভিদ। এটি অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যাগুলির মধ্যে সর্দি এবং কাশি নিরাময়ের ক্ষমতার জন্য বেশ সুপরিচিত। তুলসি পাতা উপকারী এ কথা প্রায় সবারই জানা, কিন্তু তুলসিপাতা খেলে কোনো উপকারগুলো পাওয়া যায় সে কথা অনেকেরই অজানা। ঔষুধ হিসেবে তুলসি পাতার ব্যবহার বেশ পুরোনো। এই পাতায় আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান। এগুলো মারাত্মক সব রোগ যেমন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যদির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে পারে। আধুনিক চিকিৎসা আসার আগে মানুষ নির্ভর করত ভেজষ ওষুধে। এ ছাড়া ভেজষ রাণী হিসেবে পরিচিত তুলসী পাতা।
তুলসী পাতার উপকারিতাঃ
সর্দি-কাশি নিরাময়েঃ
ঠান্ডা লাগলে অর্থাৎ সর্দি কাশি হলে তুলসি পাতা খাওয়া হয় ঔষুধ হিসেবে। সর্দি ও কাশি সারাতে এটি খুব দ্রুত কাজ করে। বুকে কফ বসে গেলে তাকে প্রতিদিন সকালে তুলসি পাতা, আদা ও চা পাতা ভালোভাবে ফুটিয়ে তাতে মধু ও লেবু মিশিয়ে খেয়ে নিন, এতে দ্রুতই উপশম মিলবে। ১ কাপ পানিতে কয়েকটি তুলসী পাতা ও ১ টুকরো আদা দিয়ে ফুটান। ফুটে উঠলে জ্বাল কমিয়ে দিন। পানি কমে অর্ধেক হয়ে গেলে নামিয়ে পান করুন। গলা খুসখুস ভাব দূর হবে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেঃ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে তুলসী পাতার তুলনাই হয়না। তুলসীর ইমিউনোমোডুলেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি নিয়মিত তুলসীর পানি পান করেন, তাহলে আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে এবং শরীরকে সংক্রমণের জন্য আরও স্থিতিস্থাপক করতে সাহায্য করতে পারে। তুলসীর ইমিউনোমোডুলেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে জানা যায়। যার মানে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি নিয়মিত তুলসী পানি পান করেন, তাহলে আপনার ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে এবং শরীরকে সংক্রমণের জন্য আরও স্থিতিস্থাপক করতে সাহায্য করতে পারে।
জেনে নিন – “রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির কিছু কার্যকরী উপায়“।
ডায়াবেটিস দূরে রাখতে সাহায্য করেঃ
তুলসী পাতা ইনসুলিন উৎপাদনের কাজ করে। বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত তুলসি পাতা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা কমতে শুরু করে। প্রতিদিন খাওয়ার আগে তুলসি পাতা খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে। তুলসী অ্যান্টি ডায়াবেটিক ঔষুধের কাজ করে। তুলসিতে থাকা স্যাপোনিন, ত্রিতারপিনিন ও ফ্ল্যাবোনয়েড ডায়বেটিস রোধ করতে কার্যকরী।
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
তুলসী পাতা খেলে তা রক্তে সুগারের মাত্রা ও কোলেস্টরল দুটোই রোধ করে যার ফলে খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, তুলসি দিয়ে তৈরি ২৫০ মিলিগ্রামের একটি ক্যাপসুল প্রতিদিন খাওয়ার ফলে ওবেসিটি ও লিপিড প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তবে যেকোনো ঔষুধ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হজমশক্তির উন্নতি করেঃ
তুলসীর কার্মিনেটিভ বৈশিষ্ট্য হজমে সাহায্য করে এবং গ্যাস ও ফোলাভাব কমাতে পারে। তুলসীর পানি পান করলে পাচনতন্ত্র প্রশমিত হয় এবং হজমে সহয়তা করে। তাছাড়া তুলসী পাতার পানি পানে আপনার শরীরের বিষাক্ত পদার্থ ও জীবাণু বের করে দিতে সাহায্য করে। এটি হজমের ব্যাধিগুলোকে দূরে রাখতে সাহায্য করে। পেটব্যথা, অম্বল, গ্যাস, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি দূর করতে তুলসী পাতা দারুণ কার্যকরী। পেটে আলসারের বিরুদ্ধেও তুলসী পাতা বেশ কাজ করে।
তুলসী পাতার চাঃ
চা পানের নানা স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে। আর এই উপকারিতার কথা ভেবে অনেকেই পছন্দ করেন ভেষজ চা। তুলসী পাতার চা পানের ফলে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর হয়। হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস এবং সাধারণ সর্দি-কাশি থেকেও স্বস্তি পাওয়া যায়।
নিচের পোস্টগুলো দেখতে পারেন –
গ্রিন টি পানের ক্ষেত্রে যে ভূলগুলো করা যাবেনা
অতিরিক্ত চা, কফি পানের ক্ষতিকর দিক
অধিকাংশ গবেষণায় দেখা গেছে, তুলসী চা শরীরে কর্টিসল হরমোনের (স্ট্রেস হরমোন) মাত্রা কমায়, যা মানসিক চাপের পাশাপাশি উদ্বেগ কমাতেও সাহায্য করে।
জেনে নিন – “মানসিক শান্তি কেন গুরুত্বপূর্ণ“।
তাছাড়া তুলসী পাতায় অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিয়মিত তুলসির চা পান করলে মুখের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু দূর হয়। তুলসী পাতার চা মাউথ ফ্রেশনার হিসেবেও কাজ করে এবং নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ কমাতেও সাহায্য করে।
তুলসী পাতার অপকারিতাঃ
তুলসী পাতার গুণাগুণ হয়তো বলে শেষ করা যাবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুস্থ থাকতে প্রতিদিন একটি করে তুলসী পাতা চিবিয়ে খান। বাসার বারান্দায় যেখানে আলো–বাতাস চলাচল করে, সেখানে লাগিয়ে রাখতে পারেন উপকারী তুলসীগাছ। শিশু থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সের মানুষের জন্য উপকারী এই গাছ।
কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এই তুলসী খাওয়া যাবেনা। এতে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতির আশংকা বেড়ে যাবে। নিচে কিছু কারন দেওয়া হল –
অন্তঃসত্ত্বা বা বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় তুলসী চা পান করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে কিনা তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। সম্ভাব্য যেকোনো নেতিবাচক প্রভাব এড়াতে, আপনি যদি গর্ভবতী হোন বা আপনার সন্তানকে স্তন্যপান করান তাহলে তুলসী চা পান করবেন না। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের সতর্কতার সাথে তুলসী ব্যবহার করা উচিত, কারণ এটি রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা থাকলে তুলসি পাতা না খাওয়াই ভালো।
উদ্ভিদে এলার্জীর সমস্যা থাকলে তুলসী পাতা এড়িয়ে চলুন।
আরো দেখুন –
ভেষজ ঔষধ নিম পাতা, উপকারিতা ও অপকারিতা
মরিঙ্গা বা সজিনা পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
পুদিনা পাতা (Mint Leaves) এর উপকারিতা ও অপকারিতা
সংগৃহীত
Leave a Reply