গ্রিন টি বলতে আমরা অনেকে এর সবুজ রংকে বুঝি। কিন্তু আসলেই তা নয়। সাধারণ চায়ের ক্ষেত্রে যেমন অনেক প্রক্রিয়াজাত করে একেক দানাদার আকার দেওয়া হয়, তবে গ্রিন টির ক্ষেত্রে বেশিরভাগই তা করা হয় না। এটি প্রক্রিয়াজাতকরণের ধরন সাধারণ চায়ের চেয়ে আলাদা। অনেক ক্ষেত্রে ছোট ছোট আস্ত পাতাই থেকে যায়।
আমরা প্রতিদিন যে চা পান করি, সেটা ব্ল্যাক টি। কখনো দুধ-চিনি মিশিয়ে, কখনো বা চিনি ছাড়াই চা পান করার প্রচলন রয়েছে। তবে আমাদের দেশে গ্রিন বা সবুজ চা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
চা-গাছের সতেজ সবুজ পাতা রোদে শুকিয়ে তাওয়ায় সেঁকে গ্রিন টি প্রস্তুত করা হয়। এর রং হালকা হলদে সবুজ। এই চায়ে পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনেয়েড নামের দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে, যা চা তৈরির পরও অক্ষুণ্ন থাকে।
গ্রিন টি আমাদের শরীরকে সতেজ ও উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। এটি হৃদরোগ ও ক্যানসারের ঝুঁকিও কমায়। এই চা আমাদের শরীরের ওজন ও রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
চীনের একদল গবেষক দেখিয়েছেন যে, সবুজ চায়ে বিদ্যমান রাসায়নিক পদার্থ মানুষের স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটায় এবং পারিপার্শ্বিক বিষয়ের স্মৃতি ও তথ্য সংরক্ষণে মস্তিষ্ককে সাহায্য করে।
যুক্তরাজ্যে এক গবেষণায় দেখা যায়, নিয়মিত গ্রিন টি সেবন করলে দাঁতের ক্ষয়রোগের ঝুঁকি কমে। তবে ওজন কমাতে হলে খাবারে ক্যালরির পরিমাণ কমাতে হবে অথবা ব্যায়ামের মাধ্যমে ক্যালরি ক্ষয় বাড়াতে হবে। শুধু গ্রিন টি পান করে ওজন কমানো সম্ভব নয়।
গ্রিন টি’র উপকারিতাঃ
বর্তমানে গ্রিন টি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এর ওজন কমানোর গুণের কারণে। এটি অতিরিক্ত চর্বি কমিয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে সাহায্য করে। বিষেশ একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এটি এক দিনে ৭০ ক্যালরি পর্যন্ত ফ্যাট বার্ন করে। তার মানে রেগুলার গ্রিন টি পানের মাধ্যমে বছরে প্রায় ৭ পাউন্ড (Pound) পর্যন্ত ওজন কমানো সম্ভব।
খুব ভালো টোনার হিসেবে কাজ করে। এটি তৈরির জন্য ১ কাপ পানিতে ৫ চা চামচ গ্রিন টি, ১ চা চমচ পুদিনা পাতা দিয়ে ১০ মিনিট ফুটান। তারপর ঠান্ডা করে ছেঁকে নিয়ে একটি স্প্রে বোতলে সংরক্ষণ করুন। এই টোনারটি দিনে ২-৩ বার ব্যবহার করুন। এটি ত্বকের চুলকানি ও প্রদাহ দূর করতে খুব উপকারী।
গ্রিন টি’তে রয়েছে এক ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট (Antioxidant) যা বার্ধক্যের গতিকে ধীর করে।
চোখের ফোলা ভাব এবং চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল (Dark Circle) কমাতে ব্যবহার করা গ্রিন টির দুটি ব্যাগ ২ ঘন্টা ফ্রিজ এ রেখে, ঠান্ডা করে চোখ বন্ধ করে এর উপর ১০ মিনিট রাখুন। এতে করে আপনার চোখের ডার্ক সার্কেল কমে যাবে।
ড্রাই গ্রিন-টির পাতা মধুর সাথে মিক্স করে স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যায় যা লোমকুপের ময়লা এবং মৃত কোষ দূর করে ত্বককে নরম ও মসৃণ করতে সাহায্য করে।
ঘামের দুর্গন্ধ দূর করতে গ্রিন টি ডিওডোরেন্ট (Deodorant) হিসেবে ভালো কাজ করে। গোসলের পর ঠান্ডা গ্রিন টি আন্ডারআর্ম (Underarm) এ লাগালে দুর্গন্ধ দূর হবে। ঠিক এমনিভাবে পায়ের দুর্গন্ধ দূর করতেও একই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
অর্ধেক কলা, ১ চা চামচ গ্রিন টি, ১ চা চামচ মধু এবং ১ চা চামচ টক দই ভালো মতো মিশিয়ে মুখে লাগান এবং শুকালে ধুয়ে ফেলুন। এটি শুষ্ক ত্বকের জন্য খুব ভালো ময়েশ্চারাইজিং মাস্ক (Moisturizing Mask) হিসেবে কাজ করে।
নিয়মিত এক কাপ গ্রিন টি পান হার্টের রোগের ঝুঁকি ৪৪% (44%) কমিয়ে দিতে সাহায্য করে এবং ব্লাড প্রেসার (Blood Pressure) অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
মশা-মাছির বা অন্যান্য পোকার উপদ্রব থেকে বাঁচতে শুকনো চা পাতা ঘরের যে কোন কোনায় রেখে, তা পোড়ালে মশা-মাছি ও অন্যান্য পোকাদের উপদ্রব কমবে।
এটি নিয়মিত পান মুখের দুর্গন্ধ দূর করে, ওরাল ব্যাকটেরিয়া (Oral Bacteria) ধ্বংস করে এবং ডেন্টাল ক্যাভিটিস (Dental Cavities) প্রতিরোধ করে।
৩-৪ টি গ্রিন টি ব্যাগ ১ লিটার পানিতে এক ঘণ্টা ফুটিয়ে ঠান্ডা করে নিন। এরপর চুল শ্যাম্পু (Shampoo) এবং কন্ডিশনিং (Conditioning) করার পর সেই পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার চুলকে শক্ত ও মজবুত করবে। চুল পড়া কমাতেও আপনি ব্যবহার করতে পারেন গ্রিন টি। এটি চুলের গোড়া শক্ত করে এবং হেয়ার ফলিকল (Hair Follicle) উদ্দীপিত করে যা নতুন চুল গজাতে বেশ সহায়ক।
ফ্রিজের দুর্গন্ধ দূর করতে এর শুকনো পাতা একটি পাতলা কাপড়ে বেঁধে ফ্রিজের এক কোণায় রেখে দিন।
মেডিকেল গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, গ্রিন টি ব্রণের সমস্যা ট্রিটমেন্টের (Treatment) জন্য খুবই কার্যকরী। এটি ত্বকে কোন রকম ইরিটেশন (Irritation) বা ড্রাইনেস (Dryness) তৈরী করা ছাড়াই ব্রণ নির্মূল করে।
গ্রিন টি মাউথওয়াশ হিসেবে খুব ভালো কাজ করে। এতে আছে এন্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রপার্টিস (Antibacterial Properties) ফলে এতে কোনো এলকোহল (Alcohol) নেই যা রেগুলার মাউথওয়াশে (Mouthwash) এ থাকতে পারে।
সবুজ চা পাতা পানিতে কয়েকদিন ভিজিয়ে রেখে গাছের গোড়ায় সেই পানি দিলে তা ফারটিলাইজার (Fertilizer) হিসেবে কাজ করে।
জেনে নিন – “গ্রিন টি পানের ক্ষেত্রে যে ভূলগুলো করা যাবেনা” বা এই পোস্টটিও দেখতে পারেন – “অতিরিক্ত চা, কফি পানের ক্ষতিকর দিক”
সংগৃহীত
Leave a Reply