ফাস্ট ফুড বা জাঙ্ক ফুড হচ্ছে এমন এক ধরনের খাবার, যা স্বাস্থ্যগত উপাদানের পরিবর্তে মুখোরোচক স্বাদের জন্য তৈরী করা হয়। এগুলো খেতে খুব সুস্বাদু কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই এই খাবার শরীরের জন্য ভালো নয়। সুস্বাদু করার জন্য এতে প্রায়শই অতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ থাকে যেগুলো অস্বাস্থ্যকর। ফাস্টফুডে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে প্রণিজ চর্বি ও চিনি থাকে যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
বর্তমানে অফিস বা স্কুলে যাওয়ার পথে দ্রুত কিছু স্ন্যাক খেয়ে নেওয়া হল ব্রেকফাস্টের নতুন ট্রেন্ড। এছাড়াও, অনেকের দুপুরের খাবার হিসেবে ফাস্টফুডের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলছে। বাড়িতে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবারের পরিবর্তে ফাস্ট ফুড হয়ে যাচ্ছে ছোট বড় সকলের পছন্দের খাবার। কিন্তু এই পছন্দ কি শরীরের জন্য উপকারী? এতে কি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে? উত্তর হল – নেই।
আজকের পোস্টে আমরা ফাস্টফুডের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জানব। তাহলে শুরু করা যাক –
ফাস্ট ফুডে ক্ষতিকর উপাদানগুলো কী কী?
ফাস্ট ফুডে বিভিন্ন অস্বাস্থ্যকর খাদ্য উপাদান থাকে যা আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নিম্নে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো –
চিনিঃ
অনেক জাঙ্ক বা ফাস্ট ফুডে কৃত্রিমভাবে প্রস্তুতকৃত চিনি ব্যবহার করা সত্ত্বেও এসব উপাদান সাধারণত সুগার বা চিনি হিসেবে উপস্থাপন করা হয় না। কিন্তু এসব উপাদান খাবার বিপাকের সময় চিনিতে রূপান্তরিত হয়। এই উপাদানগুলি যেমন কর্ন সিরাপ, ফ্রুক্টোজ বা সুক্রালোজ ইত্যাদি খাবারের ক্যালরির পরিমাণকে বাড়িয়ে দিয়ে শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে ভুমিকা রাখে। তাছাড়া কৃত্রিম চিনির ব্যবহার হওয়ার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে দেহে চিনির পরিমাণ বেশী বৃদ্ধি পায়। জাঙ্ক ফুডে থাকা চিনি এবং লবণ মুখের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া বাড়ায়। এতে অ্যাসিড তৈরি হয় যা দাঁতের এনামেল ভেঙে দেয় এবং গহ্বর সৃষ্টি করে দাঁতে। গবেষণায় দেখা গেছে চিনির বিকল্প হিসাবে সুক্রালোজ, এসিসালফেইম পটাশিয়াম এবং স্যাকারিন ব্যবহার করা হয় যেগুলোতে ক্যালরির পরিমাণ কম থাকলেও এগুলো বিপাক ক্রিয়ায় দারুণভাবে বিপত্তি সৃষ্টি করে। চিনির অতিরিক্ত ব্যবহার ফ্যাটি লিভার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এমনকি লিভার ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়ায় এই অস্বাস্থ্যকর খাবার।
হাইড্রোজেনেট তেলঃ
ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টগুলো খাবার তৈরিতে ঘন ঘন হাইড্রোজেনযুক্ত তেল ব্যবহার করে। এই হাইড্রোজেনেটেড তেল শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যার সৃষ্টি করে। বাণিজ্যিকভাবে প্যাকেজকৃত খাবার বিশেষ করে চিপস এবং ক্র্যাকারগুলি হাইড্রোজেনেটেড তেলের তৈরি। তাই এসব খাবার পরিত্যাগ করতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের এসব বাহিরের অস্বাস্থ্যকর খাবার দেওয়া থেকে বিরত থাকা অত্যান্ত জরুরী।
টারট্রাজিনঃ
হলুদ রঙের এই রাসায়নিক থাকে কোল্ড ড্রিংকস, কেক, বিস্কুট, পুডিং, সস ও মাংসের খাবারে। এর প্রভাবে শিশুদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
তাছাড়া – কুইনোলিন ইয়েলো, সানসেট ইয়েলো, কারমোসিন, ইনডিগো কারমিন, কার্বন ব্ল্যাক, বেনজোয়িক অ্যাসিড ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক, ফুড কালার ব্যবহৃত হয়। যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ। এসব রাসায়নিক বদহজম, পেটে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা, যকৃতেরও ক্ষতি করে, অ্যালার্জি, শ্বাসকষ্ট এমনকি ক্যান্সার সৃষ্টির কারণও এসব উপাদান। পিএলওএস মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় গবেষকরা জানিয়েছেন যে, যারা সবচেয়ে বেশি জাঙ্ক ফুড খেয়েছেন তাদের পাকস্থলী এবং কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।
কোমল পানীয় খেলে শরীরের কি ক্ষতি হয়?
উচ্চ ক্যালোরিঃ
জাংক ফুডে সাধারণত ক্যালোরি বেশি থাকে, যা ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতার দিকে পরিচালিত করতে পারে। বেশিরভাগ আইটেমগুলি গভীর ভাজা হয়, যা তাদের ক্যালোরি সামগ্রী বাড়ায়। যা শরীরের প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
অস্বাস্থ্যকর চর্বিঃ
ফাস্টফুডে প্রায়ই অস্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন – ট্রান্স ফ্যাট এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। এই ধরনের চর্বি হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
সোডিয়ামঃ
এই ধরণের খাদ্যে প্রায়ই সোডিয়াম বেশি থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের জন্য অবদান রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, জাঙ্ক ফুড বিভিন্ন উপায়ে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। যেসব খাবারে ক্যালোরি বেশি এবং পুষ্টির পরিমাণ কম সেগুলো শরীরে দ্রুত ভেঙে যায়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি করে। নিয়মিত জাঙ্ক ফুড খাওয়ার ফলে স্থূলতা বাড়ে, যা টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার প্রধান ঝুঁকির কারণ। জাঙ্ক ফুডে সাধারণত বেশি পরিমাণে লবণ থাকে, যা উচ্চ রক্তচাপে থেকে হওয়া টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়। জাঙ্ক ফুডে ট্রান্স এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটের উচ্চ উপাদানের কারণে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রাও বাড়াতে পারে। ট্রাইগ্লিসারাইডের উচ্চ মাত্রা টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ফাস্টফুড নিয়মিত সেবনের ফলে আসক্তি হতে পারে এবং একজনের খাদ্য গ্রহণ নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে। এর কারণ হল ফাস্টফুডে প্রায়শই লবণ, চিনি এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি বেশি থাকে, যা মস্তিষ্কে আনন্দ-প্ররোচনাকারী রাসায়নিকের মুক্তিকে ট্রিগার করতে পারে এবং আসক্তির একটি চক্র তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, জাঙ্ক ফুড শুধুমাত্র আপনার শরীরকে প্রভাবিত করে না, আপনার মনকেও প্রভাবিত করে। মলিকুলার সাইকিয়াট্রি জার্নালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জাঙ্ক ফুড খাওয়া বিষণ্ণতার ঝুঁকি বাড়ায়।
সুতরাং আমাদের উচিত, যে সকল খাদ্য আমাদের শরীরের ক্ষতি করে সেগুলো বাদ দিয়ে, শরীর ভালো রাখতে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা। “পুষ্টিকর খাবার তালিকা ও এর প্রয়োজনীয়তা” – এই পোস্টটি দেখতে পারেন।
সংগৃহীত
Leave a Reply