কার্ডিওলজিস্ট ড. এডলার এবং ইঞ্জিনিয়ার হার্টজ সিমেন্স ১৯৫৩ সালে প্রথম হার্টের আল্ট্রাসনোগ্রাম করেন। ১৯৫৮ সালে গাইনি বিভাগে আল্ট্রাসাউন্ড নিয়ে আসেন ড. ইয়ান ম্যাকডোনাল্ড। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত যেসব আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়েছে, সেগুলো ছিল ২ডি (2D)। বর্তমানে ৩ডি ও ৪ডি (3D, 4D) আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয়।
আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক ছবি নেওয়া হলে তাকে বলে ৩ডি। আবার গতিশীল ও চতুর্থ মাত্রা হিসেবে সময় থাকলে তা হয় ৪ডি (4D) আল্ট্রাসনোগ্রাম।
অতিউচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি শব্দ তরঙ্গের নামই মূলত আল্ট্রাসনোগ্রাফি (Ultrasonography)। সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে আল্ট্রাসনোগ্রাফি সহায়ক শক্তির ভূমিকায় কাজ করে ।এই যন্ত্রটির সাহায্যে শরীরের ভেতরের অঙ্গ প্রতঙ্গের ছবি দেখে রোগ নির্ণয় করা হয়, তবে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহারে ঝুঁকির সম্ভাবনা ও কম।
মায়ের গর্ভে শিশুর অবস্থান এবং শিশুর সুস্থতা দেখত জেনেটিক সমস্যাসহ অন্যন্যা কোন সমস্যা আছে কিনা আল্ট্রাসনোগ্রাফি এর মাধ্যমে দেখা যায়। সেই সঙ্গে লিভার কিডনীসহ মানুষের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কোন সমস্যা আছে কিনা দেখার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া কিছু কিছু বায়োপসি করা যায় আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে আল্ট্রাসনোগ্রাম গাইডেড এফএনএসি আল্ট্রাসাউন্ড শব্দ টা সাধারণ মানুষ কানে শুনতে পায় না।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ, গঠন-প্রকৃতিসহ বিভিন্ন বিষয় জানা যায়। গর্ভকালীন যেকোনো জরুরী পরিস্থিতিতে আল্ট্রাসনোগ্রাফি একজন চিকিৎসকের জন্য সর্বোত্তম ও নির্ভরযোগ্য ডাক্তারি পরীক্ষা পদ্ধতি। আল্ট্রাসনোগ্রাফির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অন্যান্য রেডিওলজিকাল পরীক্ষার তুলনায় কম এবং এটা বেশ নিরাপদও বটে।
এছাড়াও এর সাহায্যে লিভার, স্প্লিন বা প্লিহা, কিডনি, অগ্ন্যাশয়, পাকস্থলী, পিত্তথলি, চক্ষু, থাইরয়েড, মূত্রথলীসহ নারী ও পুরুষের যৌনাঙ্গের নানাবিধ রোগ সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব। আজকের পোস্টে আমরা আল্ট্রাসনোগ্রাফি সম্পর্কে বিস্তারিত জানব।
আল্ট্রাসনোগ্রাফি কেন করা হয়?
রোগনির্ণয়ে আলট্রাসনোগ্রাফির ব্যাপক ভূমিকার কথা আমরা জানতে পাই। বিভিন্ন রোগে রোগীরা যখন চিকিৎসকের কাছে যান, তার নিচের পেট (লোয়ার এবডোমিন), ওপরের পেট (আপার এবডোমেন) বা শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আলট্রাসনোগ্রাফি করার পরামর্শ দিতে দেখা যায়।
মাতৃগর্ভে শিশুর অবস্থান ও তার সুস্থতা সম্পর্কিত তথ্য পেতে আল্ট্রাসনোগ্রাম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। যদিও প্রচলিত ধারণা যে আল্ট্রাসনোগ্রাম পেটে করা হয়; কিন্তু শরীরের লিভার, হার্ট, কিডনিসহ প্রায় সব স্থানেই করা যায়। কিছু কিছু বায়োপসি করতেও আল্ট্রাসনোগ্রামের ব্যবহার করা হয়। পেটে বেশিরভাগ সময় ব্যাথা থাকলে আলট্রাসনোগ্রাফির পরামর্শ দেওয়া হয়। রিপোর্টের মাধ্যমে ব্যাথার মূল কারণ জানা যায়।
আলট্রাসনোগ্রাফির ধরন সমূহঃ
আলট্রাসনোগ্রাম প্রধানত তিন প্রকার। যেমন –
Pregnancy ultrasound – যার আরেক নাম Prenatal ultrasound যা গর্ভবস্থায় করা হয়।
Diagnostic ultrasound – যাকে sonography বা diagnostic সনোগ্রাফিও বলা হয়ে থাকে।
Ultrasound guidance for procedures – মেজর কোন অপারেশনের ক্ষত্রে এটি ব্যবহৃত হয়।
তাছাড়া, অন্যান্য ধরনগুলো হল –
Abdominal Ultrasound – বিশেষত তীব্র পেট ব্যাথার কারন ও অবস্থা জানার জন্য চিকিৎসকরা এই টেষ্টটি করতে দেন।
Kidney (renal) Ultrasound – কিডনীর নানা ধরনের সমস্যা সনাক্ত করার জন্য করা হয়।
Breast Ultrasound – স্তনের কোন রোগ সম্পর্কে জানতে হলে এই পরীক্ষা করা হয়।
Doppler Ultrasound – রক্তনালী ও শিরা -উপশিরার ভেতর দিয়ে রক্তের চলাচল সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে Doppler ultrasound করা হয়।
Pelvic Ultrasound – মানব শরীরের কিছু গোপণ অঙ্গ যেমন মূত্রাশয়, প্রোস্টেট, মলদ্বার, ডিম্বাশয়, জরায়ু এবং
যোনির অবস্থা জানতে এই আলট্র্রাসাউন্ড করা হয়।
Transvaginal Ultrasound – সাধারণত মহিলাদের যৌনি অঞ্চল, বিশেষ করে জরায়ু বা ডিম্বাশয়ের মতো প্রজনন টিস্যুর অবস্থা জানতে এই পরীক্ষা করা হয়।
Thyroid Ultrasound – থাইরয়েডের বিভিন্ন অবস্থা সম্পর্কে ধারণা পেতে এই টেষ্টটি করানো হয়।
আলট্রাসনোগ্রাফির জন্য প্রস্তুতিঃ
আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর পূর্বে রোগীর কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হয়, এবং সতর্কও থাকতে হয়। সেগুলোও জেনে নেওয়া জরুরী। যদি রোগী ওপরের পেট পরীক্ষা করে, তাহলে তাকে ছয় থেকে আট ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হবে। আর যদি তলপেটের পরীক্ষা করে, তবে প্রস্রাবের পূর্ণ চাপ লাগবে। এ ক্ষেত্রে না খেয়ে থাকার বাধ্যবাধকতা নেই। এবং গর্ভকালীন অবস্থায়ও সে খেতে পারবে। কারণ, গর্ভাবস্থায় আমরা তলপেটে দেখব। তবে যদি কোনো রোগীর ওপরের এবং নিচের পেট দুটোই আলট্রাসনোগ্রাফি করতে হয়, তাহলে তাকে না খেয়েও থাকতে হবে। পাশাপাশি তার প্রস্রাবের চাপও লাগবে।
তাছাড়া, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
আল্ট্রাসনোগ্রাফির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াঃ
অধিকাংশ মানুষের মনে এই প্রশ্নটি থাকে যে, আলট্রাসোনোগ্রাম কোনো ধরনের ঝুঁকি গ্রহণ করে কি-না বা এটি কি নিরাপদ কি-না এই বিষয়ে। এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হচ্ছে অন্যান্য পরীক্ষার তুলনায় আলট্রাসনোগ্রাম একদমই কম ঝুঁকি বহন করে থাকে। গর্ভাবস্থায় এই পরীক্ষা করার ফলে কোনো ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে না। কারণ এক্সরে বা সিটি স্ক্যান জাতীয় পরীক্ষাগুলো করার ক্ষেত্রে রেডিয়েশনে প্রয়োগ করা হলেও আল্ট্রাসাউন্ড এর ক্ষেত্রে কোনো রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয়না। যার ফলে অন্যান্য পরিক্ষার তুলনায় এটি অনেকটা নিরাপদ।
কেমন খরচ হতে পারেঃ
প্রকারভেদে আলট্রাসনোগ্রাফির খরচ (১২০০ – ৬০০০) টাকা। তবে বিভিন্ন ধরণ অনুযায়ী এবং বিভিন্ন হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এর খরচ কম-বেশী হতে পারে।
সংগৃহীত
Leave a Reply