বোন মিনারেল ডেনসিটি (BMD) টেস্ট – কেন এবং কখন করাবেন?

Bone Mineral Density (BMD)

আমাদের দেহের হাড় হচ্ছে শরীরের প্রধান কাঠামো, যা আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে এবং চলাফেরা করতে সাহায্য করে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই হাড় দুর্বল হয়ে যেতে পারে। হাড়ের স্বাস্থ্য নির্ধারণে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হলো Bone Mineral Density (BMD) টেস্ট। চলুন জেনে নিই, কেন এই টেস্ট করা জরুরি, কাদের জন্য প্রয়োজনীয় এবং কখন করানো উচিত।

বোন মিনারেল ডেনসিটি (BMD) টেস্ট কী?

Bone Mineral Density Test হল একটি বিশেষ রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা যার মাধ্যমে হাড়ে খনিজ পদার্থ (মূলত ক্যালসিয়াম) কতটুকু আছে তা পরিমাপ করা হয়। এর মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব বা শক্তি নির্ধারণ করা যায় এবং অস্টিওপোরোসিস বা হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি রয়েছে কি না তা জানা সম্ভব হয়।

এই টেস্ট সাধারণত “DEXA Scan” বা “Dual-energy X-ray Absorptiometry” নামেও পরিচিত।

কেন BMD টেস্ট করা প্রয়োজন?

BMD টেস্ট করার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। নিচে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সম্পর্কে জানবো-

1️⃣ অস্টিওপোরোসিস নির্ণয়ে

BMD টেস্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল অস্টিওপোরোসিস রোগ নির্ণয় করা। এই রোগে হাড় ধীরে ধীরে পাতলা এবং দুর্বল হয়ে যায়, ফলে সামান্য আঘাতেও ভেঙে যেতে পারে।

2️⃣ হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি নির্ণয়ে

যাদের আগেই হাড় ভেঙে গেছে বা যারা ঝুঁকিতে আছেন (বয়স, হরমোন কমে যাওয়া ইত্যাদি কারণে), তাদের জন্য BMD টেস্ট অত্যন্ত জরুরি। এই টেস্ট আগেই সতর্কতা নেওয়ার সুযোগ দেয়।

3️⃣ হরমোন জনিত সমস্যা

মহিলাদের মেনোপজের পর শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ হঠাৎ কমে যায়, যা হাড় ক্ষয়ের অন্যতম কারণ। এছাড়াও থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, অথবা কোর্টিসল হরমোনের ভারসাম্যহীনতাও হাড় দুর্বল করে।

4️⃣ ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি এর অভাব

যদি আপনার দেহে ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থেকে থাকে, তাহলে হাড়ে খনিজ জমা কমে যেতে পারে। এই অবস্থার প্রকৃত চিত্র পেতে BMD টেস্ট সহায়ক।

কখন করাবেন BMD টেস্ট?

BMD টেস্ট করানোর সময় ও প্রয়োজন নির্ভর করে বয়স, জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্য ইতিহাস ও হরমোন ভারসাম্যের উপর। নিচে কিছু সাধারণ নির্দেশনা দেওয়া হলো:

✅ যাদের বয়স ৬৫ বছর বা তার বেশি (নারী)

এই বয়সের নারীদের অস্টিওপোরোসিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাই নিয়মিত স্ক্যান করানো উচিত।

✅ ৭০ বছরের বেশি পুরুষদের জন্য

পুরুষদের হাড় সাধারণত ধীরগতিতে ক্ষয় হয়, কিন্তু ৭০ বছরের পর থেকে নিয়মিত স্ক্যান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

✅ মেনোপজের পর নারীরা

মেনোপজের পর হাড় দুর্বল হতে শুরু করে। তাই ৫০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ।

✅ যাদের পরিবারে অস্টিওপোরোসিসের ইতিহাস রয়েছে

জেনেটিক কারণে হাড়ের রোগ হতে পারে। তাই পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আগে থেকেই সতর্ক হওয়া উচিত।

✅ ধূমপান বা মদ্যপান যাঁরা করেন

এই অভ্যাসগুলো হাড় দুর্বল করার জন্য পরিচিত। ফলে BMD স্ক্যান প্রয়োজন হতে পারে।

✅ দীর্ঘদিন স্টেরয়েড ওষুধ খাচ্ছেন এমন কেউ

স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দীর্ঘদিন খেলে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

কিভাবে BMD টেস্ট করা হয়?

BMD টেস্ট একটি সহজ, ব্যথাহীন ও নিরাপদ পরীক্ষা। নিচে ধাপগুলো দেওয়া হলো:

  • আপনি একটি স্ক্যানার টেবিলে শুয়ে থাকবেন।

  • আপনার কোমর, মেরুদণ্ড, বা হিপ অঞ্চলে X-ray এর মাধ্যমে ছবি তোলা হবে।

  • পুরো পরীক্ষা করতে ১৫–২০ মিনিট সময় লাগে।

  • তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা খুবই কম, তাই এটি নিরাপদ।

BMD রিপোর্ট

BMD (Bone Mineral Density) টেস্টের রিপোর্ট সাধারণত খুব দ্রুত পাওয়া যায়।

✅ রিপোর্ট পেতে সময়: সাধারণত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট পাওয়া যায়।

✅ কিছু আধুনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বা হাসপাতালে টেস্টের পরপরই (১–২ ঘণ্টার মধ্যে) রিপোর্ট দিয়ে দেওয়া হয়।

যদি জরুরি প্রয়োজন থাকে, তাহলে টেস্ট করার সময়ই জিজ্ঞেস করুন রিপোর্ট কখন পাওয়া যাবে। অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্ট কুরিয়ার বা ইমেইলের মাধ্যমে দেওয়া হয়।

কেমন খরচ হতে পারে?

বাংলাদেশে BMD টেস্টের খরচ বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা হাসপাতালের উপর নির্ভর করে। সাধারণত:

জায়গাআনুমানিক খরচ (BDT)
🏥 সরকারি হাসপাতাল৫০০–১,৫০০ টাকা (কম দামে, অপেক্ষা বেশি হতে পারে)
🏥 বেসরকারি হাসপাতাল/ডায়াগনস্টিক সেন্টার২,০০০–৫,০০০ টাকা
🏥 আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হাসপাতাল (যেমন ইউনাইটেড, এপোলো, স্কয়ার)৫,০০০–৮,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে
খরচ নির্ভর করে আপনি কোন অংশের হাড় স্ক্যান করাচ্ছেন (যেমন: কোমর, হিপ, মেরুদণ্ড), এবং প্রতিষ্ঠানের মান অনুযায়ী এবং বিভিন্ন হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এর খরচ কম-বেশী হতে পারে।

হাড় শক্তিশালী রাখতে কিছু টিপস

BMD স্ক্যানের পাশাপাশি হাড় সুস্থ রাখতে নিচের বিষয়গুলো মেনে চলা জরুরি:

✔️ পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি গ্রহণ

  • দুধ, দই, ছানা, পালংশাক, বাদাম

  • রোদে থাকা, বা প্রয়োজনে ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট

✔️ ব্যায়াম

ওজন বহন করে এমন ব্যায়াম যেমন হাঁটা, দৌড়, স্কিপিং – এগুলো হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতে সাহায্য করে।

✔️ ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন

এই দুটি অভ্যাস হাড় দুর্বল করে। সুস্থ হাড়ের জন্য এগুলো পরিহার করুন।

বোন মিনারেল ডেনসিটি টেস্ট শুধু বয়স্ক বা অসুস্থদের জন্য নয় – বরং যেকোনো বয়সেই যদি হাড় দুর্বল হওয়ার লক্ষণ দেখা যায় বা ঝুঁকি থাকে, তাহলে এই টেস্ট করানো উচিত। সময়মতো রোগ নির্ণয় করলে প্রতিরোধ সহজ হয় এবং জীবনধারা উন্নত রাখা সম্ভব হয়।