এমআরআই (MRI) নিয়ে বিস্তারিত

mri, test, price, cost, rate, value, bangladesh, brain, scan, এমআরআই, টেষ্ট, বাংলাদেশ, মূল্য, খরচ

এমআরআই যার পূর্ণ অর্থ হল (Magnetic Resonance Imaging), সবচেয়ে অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয়কারী (Diagnostic) একটি পরীক্ষা, যার মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গের (internal body structures) খুব স্পষ্ট ছবি (Image) নেওয়া হয়, যাতে করে নির্দিষ্ট রোগ বা অস্বাভাবিক অবস্থা খুঁজে বের করা যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি Radiology বিভাগের অন্তর্গত। MRI একটি শক্তিশালী চৌম্বক ক্ষেত্র এবং রেডিও তরঙ্গ এর মাধ্যম ব্যবহার করে অঙ্গ, টিস্যু এবং শরীরের বিভিন্ন কাঠামোর ছবি তৈরি করে থাকে। এটি বিভিন্ন চিকিৎসা অবস্থা এবং পর্যবেক্ষণে মস্তিষ্ক, পেশী, অঙ্গ এবং জয়েন্টগুলির মতো নরম টিস্যু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে। এমআরআই বিংশ শতাব্দীর মহান চিকিৎসা হিসাবে ব্যাপকভাবে স্বীকৃত এবং যা অগণিত মানুষের জীবন বাঁচিয়েছে বা আয়ু বাড়িয়েছে।

এমআরআই টেস্ট কেন করা হয়?

মস্তিষ্ক, মেরুদণ্ড, হৃৎপিণ্ডসহ দেহের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের যেকোনো সমস্যা নির্ণয় করতে এমআরআই একটি নির্ভরযোগ্য পরীক্ষা। এর মাধ্যমে যেসব রোগ নির্ণয় করা যায় –

শরীরের প্রতিটি টিস্যুর অবস্থান বুঝার ক্ষেত্রে।

টিউমার, স্ট্রোক, ব্রেইনের আঘাত, মস্তিষ্কের অন্যান্য রোগ ও স্পাইনাল কর্ড এর অবস্থা বুঝার ক্ষেত্রে।

মেরুদণ্ডের রোগ বা আঘাতের জন্য।

হাঁটু, গোড়ালি, কবজি, কাঁধ ইত্যাদি অস্থিসন্ধি, হাড় ও মাংসপেশির সমস্যা হলে।

দূর্ঘটনায় মাথায় ইন্টারনাল ব্লিডিং হচ্ছে কি-না তা বুঝার জন্য।

রক্তনালির রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে।

নাক, কান, গলা ও চোখের সমস্যার ক্ষেত্রে।

প্রোস্টেটের সমস্যার ক্ষেত্রে

ক্যানন্সারের ক্ষেত্রে।

নারীদের তলপেট ও স্তনের অস্বাভাবিকতা।

লিভার, কিডনি, পিত্তনালিসহ বিভিন্ন আন্ত্রিক রোগ।

এছাড়াও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

এমআরআই (MRI) কেন করা হয়?

একজন রোগীর শরীরের ভেতরের কোনও বিশেষ অঙ্গ (Organs) কিংবা পুরো শরীরের কাঠামো (Structure) দেখতে এমআরআই করা হয়। চুম্বক (Magnet) ও রেডিও তরঙ্গ (Radio waves) ব্যবহার করে এমআরআই স্ক্যানের মাধ্যমে শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অবস্থা জানা যায়। অনেক সময় সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে রোগ নির্ণয় করা গেলেও এমন কিছু শারীরিক সমস্যা আছে যেগুলো এমআরআই ছাড়া ধরা পড়েনা।

এমআরআই এর মাধ্যমে ডাক্তাররা রোগীর শরীরে থাকা লিগামেন্ট (Ligaments) থেকে শুরু করে টিউমার পর্যন্ত প্রায় সকল অবস্থাই দেখতে পান এবং পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। সেনসিটিভ এবং সিরিয়াস ধরণের রোগ নির্ণয়ের জন্যে মানুষের ব্রেন এবং স্পাইনাল কর্ড (Spinal Cord) পরীক্ষা করার জন্যে এমআরআই একটি অসাধারণ মেডিকেল টেস্ট।

মানব শরীরের কোন কোন অঙ্গের (MRI) করা যায়?

শরীরের প্রায় সকল অঙ্গেরই এমআরআই করা যায়। এমনকি, পুরো শরীরটাই এমআরআই করা যায়। তবে, রোগ নির্ণয় ও পর্যবেক্ষণের জন্যে শরীরের যেসব বিশেষ অঙ্গের এমআরআই করা হয় সেগুলো হলো –

বুক (Chest)

পেট (Abdomen)

হৃৎপিন্ড (Heart)

ফুসফুস (Liver)

পিত্তথলি (Biliary Tract)

কিডনি (Kidney)

প্লীহা (Spleen)

অস্ত্র (Bowel)

অগ্ন্যাশয় (Pancreas)

অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি (Adrenal Glands)

পেলভিক অঙ্গ (Pelvic Organs)

প্রজনন অঙ্গ (Reproductive Organs )

মহিলাদের জরায়ু এবং ডিম্বাশয় (Uterus and Ovaries)

পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থি (Prostate Gland), ইত্যাদি।

এমআরআই টেষ্টের মাধ্যমে কি কি রোগ নির্ণয় করা যায়?

এই টেষ্টের মাধ্যমে বিষেশত ব্রেইনের রোগ, হার্টের রোগ, হাড়ের রোগ, বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার সহ নাক, কান, গলার বিভিন্ন রোগ নির্ণয় করা যায়।

এমআরআই এর প্রস্তুতি নিবেন কিভাবে?

এমআরআই এর জন্যে বাসা থেকে কোনও প্রস্তুতি নিতে হয় না। হাসপাতালে কিংবা ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে আসলে সেখান থেকেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। যেমন, এমআরআই স্ক্যানিং মেশিনে প্রবেশ করানোর পূর্বেই একটি ফর্ম পূরণ করতে হয়। এরপর, হাসপাতালের নির্ধারিত গাউন বা ইউনিফর্ম পরিয়ে দেয়া হয়। একজন এমআরআই টেকনোলোজিস্ট কিংবা রেডিওলোজিস্টকে রাখা হয়। মেশিন পরিচালনার জন্যে আরেকজন টেকনিশিয়ান থাকেন।

MRI করার সময় যেসব জিনিষ সঙ্গে রাখা যাবে নাঃ

ওয়ালেট, ব্যাংক কার্ড, পার্স, ম্যাগনেটিক স্ট্রিপস্।

স্মার্টফোন, ট্যাবলেট, সেলফোন ও বিপার বা ইলেক্ট্রিক জাতীয় ডিভাইস।

মেটালিক জুয়েলারি, তাবিজ এবং হাতের ঘড়ি।

এক্সটারনাল হিয়ারিং এইডস্।

কাগজ, কলম, কয়েন, চাবি।

চুলের ক্লিপ, চুলের পিন, ব্যারেট।

জুতা, সেফটি পিন, বেল্ট, বাকলস্।

কিভাবে এমআরআই পরীক্ষা করা হয়?

এমআরআই (MRI) পরীক্ষাটি যন্ত্রণাহীন। যখন স্ক্যানার কাজ করে, তখন এটি দুমদাম শব্দ তৈরি করতে পারে, এইজন্য আপনার কানে হেডফোন লাগিয়ে দেওয়া হতে পারে এবং এতে আপনি গানও শুনতে পারেন। এই শব্দ স্বাভাবিক এবং আপনার চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। একটি পরীক্ষা সম্পূর্ণ করতে ১০ থেকে ৪০ মিনিট সময় ব্যয় হয়, তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১ ঘন্টা বা তার বেশি সময় লাগতে পারে। পরীক্ষা চলাকালীন রোগীর উচিত সম্পূর্ণ শিথিল থাকা, কোন রকম নড়াচড়া না করা। নড়াচড়া করলে MRI রিপোর্টের ছবি ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।

যে সকল রোগী এমআরআই পরীক্ষার জন্য শান্তভাবে শুয়ে থাকতে পারেন না তাদেরকে এই পরীক্ষাকালীন সময়ের জন্য ঔষধের মাধ্যমে হালকা ঘুম পাড়িয়ে দেয়ার জন্য শিরাতে একটি ইঞ্জেকশন দিতে হয়। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (Anesthesiologist) দ্বারা সম্পন্ন করা হয়। জাগরণের পর ঔষধ থেকে কোন দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সাধারণত থাকে না, অথবা স্বল্প সময় নিদ্রালু (drowsy) মনে হতে পারে।

আপনার এমআরআই পরীক্ষা করার সময়, স্ক্যানার অপারেটর (MRI Technologist) জানালা দিয়ে বা মনিটরে সব সময়ে আপনাকে দেখেন, প্রয়োজনে আপনি তার সাথে কথা বলতে পারেন এবং শুনতে পারেন। যদি আপনার কোন প্রশ্ন থাকে বা অস্বাভাবিক কিছু যদি মনে করেন তবে পরীক্ষা চলাকালীন সময় তার সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন।

সমগ্র এমআরআই পরীক্ষাটি সম্পন্ন হওয়ার পরে, ছবিগুলি একজন MRI বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (MRI Specialist Radiologist) দেখেন এবং এই ছবিগুলি (Scan/Image) ব্যাখ্যা করে একটি রিপোর্ট লিখেন। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করার জন্য এই রিপোর্ট নিয়ে আপনার ডাক্তারের (Referring Physician) সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত, এবং প্রয়োজনে পরে Radiologist -এর সাথেও কথা বলতে পারেন।

এম আর আই কি নিরাপদ ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন?

MRI পরীক্ষাটি একদম ব্যথাবিহীন এবং অনেক বেশি সূক্ষ্ম ও নিরাপদ। এই পরীক্ষায় কোনো ক্ষতিকারক বিকিরণ বা তেজস্ক্রিয়তা হয় না। ফলে এতে ক্ষতিকর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো টিস্যুর ক্ষতি করে না। এতে ব্যবহৃত কনট্রাস্ট এজেন্ট কোনো সমস্যার সৃষ্টি করে না।

MRI রিপোর্ট ডেলিভারির সময়?

MRI টেস্ট করতে সাধারণত টেস্ট এর ধরণ এর উপরে ভিত্তি করে সময় নির্ধারণ হয়। রিপোর্ট ডেলিভারি সময় সাধারণত ২-৩ দিন বা তারও বেশি সময় লাগতে পারে। তবে ডেলিভারি সময় হাসপাতাল বা ডায়াগনষ্টিক সেন্টার এর উপরে নির্ভর করে দেয়া হয়।

কেমন খরচ হতে পারে?

প্রকারভেদে এমআরআই (MRI) এর খরচ (৩৫০০ – ২৫,০০০) টাকা হতে পারে। তবে বিভিন্ন ধরণ অনুযায়ী এবং বিভিন্ন হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এর খরচ কম-বেশী হতে পারে।

সংগৃহীত