যদি কোনও ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে পড়েন তবে চিকিৎসক ওষুধ দেন, তবে যদি খুব সমস্যা হয় তবে সেই ব্যক্তিকে প্রায়শই পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। কারণ শরীরে বাইরের অংশ দেখা গেলেও ভিতরের অংশ দেখা যায় না। সেজন্য রক্ত, প্রসাবের টেষ্ট করানো হয়। রোগীর অবস্থা যদি গুরুতর হয়, সেক্ষেত্রে বিভিন্ন আধুনিক টেষ্টের প্রয়োজন হয়। আজকের পোস্টে আমরা আধুনিক একটি টেষ্ট সম্পর্কে জানব, তা হলো এন্ডোস্কপি।
এন্ডোস্কোপি কি?
এন্ডোস্কোপি একটি অত্যাধুনিক এবং সরাসরি দেখে রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা যা দ্বারা গলা, খাদ্যনালী, পাকস্থলী ও ডিওডেনামের দ্বিতীয় অংশ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা যায় এবং এখানে কোন ঘা বা আলসার, টিউমার বা ক্যান্সার, পলিপ, রক্তপাত, খাদ্যনালী পাকস্থলী বা ডিওডেনাম চেপে যাওয়া অথবা লিভার সিরোসিসের প্রতিক্রিয়ায় খাদ্যনালীর নীচের অংশের রক্তনালী ফুলে যেয়ে যে ভ্যারিক্স তৈরি করে তা দেখা যায়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ নিরূপণ ছাড়াও উল্লেখিত অংশসমূহের অনেক রোগের সফল ও কার্যকরী চিকিৎসা প্রদান সম্ভব।
এন্ডোস্কোপি কত প্রকারের হয়?
এন্ডোস্কোপি শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ বা টিস্যুতে কোন সমস্যা বা অস্বাভাবিকতা সনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের এন্ডোস্কোপি করা হয়।
মেডিয়াস্টিনোস্কোপি (Mediastinoscopy) – থোরাসিক সার্জনরা ফুসফুসের কেন্দ্রীয় অংশগুলি পরীক্ষা করতে এই সরঞ্জামটি ব্যবহার করেন।
ল্যারিঙ্গোস্কোপি (Laryngoscopy) – এই ডিভাইসটি ল্যারেক্স পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয় এবং এটি রোগীর মুখের মধ্যে ঢোকানো হয়।
ব্রঙ্কোস্কোপি (Bronchoscopy)– এই পদ্ধতিটি ফুসফুস পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।
থোরাকোস্কোপি / প্লাইরোস্কোপি (Pleuroscopy)- এই পদ্ধতিটি বুকের অংশটি পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।
ল্যাপারোস্কোপি (Laproscopy)- এই প্রক্রিয়াটি পেটের চারপাশের অঞ্চলগুলি পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।
আর্থোস্কোপি (Arthroscopy)- এই পদ্ধতিটি যৌথ হাড়গুলি পর্যবেক্ষণ করতে ব্যবহৃত হয়।
কোলনোস্কোপি (কোলনোস্কোপি) (Colonoscopy)- এই প্রক্রিয়াটি অন্ত্র এবং মলদ্বারের সমস্যাগুলি দেখতে ব্যবহৃত হয়।
হিস্টেরোস্কোপি (Hysteroscopy) – এই পদ্ধতিটি জরায়ু পরীক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়।
এন্টারোস্কোপি (Enteroscopy) – এই পদ্ধতিটি অন্ত্রের ব্যাঘাতগুলি অনুসন্ধান করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
সিস্টোস্কোপি (Cystoscopy) – এই পদ্ধতিটি মূত্রনালীতে বাধার সন্ধান করতে ব্যবহৃত হয়।
ইউরেটারোস্কপি (Uterescopy)- এই পদ্ধতিটি ইউরেটার পরীক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হয়।
সিগময়েডোস্কোপি (Sigmoidoscopy)- এই পদ্ধতিটি মলদ্বার খাল এবং বৃহত অন্ত্রের ব্যাঘাতের জন্য অনুসন্ধান করতে ব্যবহৃত হয়।
উচ্চ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এন্ডোস্কোপি (Upper Gastrointestinal Endoscopy)- এই পদ্ধতিটি অন্ত্রের ট্র্যাক্ট সম্পর্কে তথ্য পেতে ব্যবহৃত হয়।
কি কি কারনে এন্ডোস্কোপি করা হয়?
পেটের যন্ত্রণার জন্য।
আলসারের সম্ভাবনা দেখা দিলে।
গ্যাসট্রিক বা অন্যান্য কঠিন পেটের সমস্যা দেখা দিলে।
হজম প্রণালীতে রক্তক্ষরণ ঘটলে।
বদহজম হলে।
গিলে খেতে অসুবিধা হলে।
দীর্ঘ্যস্থায়ী কোঠ্যকাঠিন্য হলে।
রক্তবমি হলে তার কারণ নির্ণয়সহ রক্তক্ষরণ বন্ধের তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া
খাদ্যনালী থেকে অপ্রয়োজনীয় বাহ্যিক পদার্থের অপসারণ। যেমন, মাছের কাঁটা, মাংসের হাড়, মাংসপিণ্ড, মার্বেল, পয়সা, ব্যাটারি, বোতাম, নাকফুল, কানের দুল, কৃত্রিম দাংতের অংশবিশেষ, তারকাটা, পিন, হিজাবের পিন ইত্যাদি।
Helicobacter pylori (Bacteria) ইনফেকশন সনাক্ত করা।
পলিপ অপসারণ।
এছাড়াও ডাক্তার বায়োপসি নিতে এন্ডোস্কোপি করতে পারেন। বায়োপসি বা টিস্যু নেওয়া হয় বিশেষ কোন রোগের সন্দেহ হলে, টিস্যু ল্যাব টেস্ট করার জন্য।
এন্ডোস্কোপির জন্য কিভাবে তৈরী হতে হয়?
এন্ডোস্কোপি পরীক্ষার জন্য রোগীকে (৬ – ৮) ঘন্টা খালিপেটে থাকতে হয় । সেই সাথে লক্ষ্য রাখতে হয় পেট যেন একেবারেই পরিষ্কার থাকে । যেহেতু পরিক্ষাটি পেটের সমস্যা চিহ্নিত করার জন্য করা হয় সেহেতু পরিক্ষার সময় পেট পুরোপুরি খালি থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । পেট সম্পূর্ণ খালি না থাকলে সমস্যার সমাধান করা কঠিন হয়ে পড়ে ।
সতর্কতাঃ এন্ডোস্কোপি পরীক্ষার সময় লক্ষ্য রাখা হয় যাতে রোগীর কোনরকম সমস্যা না দেখা দেয় । পরীক্ষা চলাকালীন রোগীর যাতে কোনও অসুবিধা না হয় সেদিকেও নজর রাখা হয় । কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভেইন বা শিরায় ইনজেকশন ( অ্যানাস্থেশিয়া ) দিয়ে রোগীকে হাল্কা অবচেতন করা হয় ।
এন্ডোস্কোপি কীভাবে করা হয়?
হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এন্ডোস্কপি করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি শুরু করার আগে, চিকিৎসক সেই অংশটি পরীক্ষা করে যেখানে এন্ডোস্কোপি করতে হবে। এন্ডোস্কোপি পদ্ধতিটি বেদনাদায়ক নয়, তবে কিছু লোক প্রক্রিয়া চলাকালীন সামান্য ব্যথা অনুভব করতে পারেন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে এন্ডোস্কোপি করার জন্য লোকাল এনেস্থেসিয়া দিয়ে রোগীকে অজ্ঞান করে নেয়া হয়। যাতে রোগীর কোনও কিছুর অনুভূতি না হয় । এগুলি ছাড়াও রোগীকে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করার জন্য সিডেটিভ দেওয়া হয়ে থাকে।
এন্ডোস্কোপি করতে কত সময় লাগে?
এন্ডোস্কোপির সময়কাল পরিবর্তিত হতে পারে এন্ডোস্কোপির ধরন এবং স্বতন্ত্র পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে একটি Endoscopy পদ্ধতি সাধারণত ১৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টার মতো সময় লাগে।
সাধারণ ধরনের এন্ডোস্কোপির জন্য এখানে কিছু আনুমানিক সময়সীমা দেওয়া হলোঃ
আপার এন্ডোস্কোপি (Upper Endoscopy) (Esophagogastroduodenoscopy) (EGD): এই পদ্ধতিটি, যা উপরের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট পরীক্ষা করে, প্রায় ১৫ থেকে ৩০ মিনিট সময় নেয়।
কোলনোস্কোপি (Colonoscopy): কোলনোস্কোপি কোলন এবং মলদ্বার পরীক্ষা করে। সাধারণত প্রায় ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা সময় নেয়।
ব্রঙ্কোস্কোপি (Bronchoscopy): ব্রঙ্কোস্কোপি শ্বাসনালী এবং ফুসফুস পরিদর্শন করতে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত ৩০ মিনিট থেকে এক ঘন্টা স্থায়ী হয়।
এন্ডোস্কোপির খরচ কত হতে পারে?
প্রকারভেদে এন্ডোস্কোপির খরচ (২০০০ – ৫০০০) টাকা। তবে বিভিন্ন ধরণ অনুযায়ী এবং বিভিন্ন হাসপাতাল বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এর খরচ কম-বেশী হতে পারে।
এন্ডোস্কোপির বিভিন্ন ঝুঁকি কি?
এন্ডোস্কোপির পরে, রোগী নিম্নলিখিত লক্ষণগুলির কয়েকটি অনুভব করতে পারেন,
পেট ফুলে যাওয়া
ছেদন স্থানে হালকা ব্যথা
হালকা রক্তপাত
গলা ব্যথা
ক্র্যাম্পিং
নিদ্রাহীনতার কারণে বিভ্রান্তির অনুভূতি
সাধারণত, এই লক্ষণগুলো হালকা হয় এবং সময়ের সাথে সাথে উন্নত হয়।
এন্ডোস্কোপি পদ্ধতির ফলাফল রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি এন্ডোস্কোপি একটি আলসার খুঁজে বের করার জন্য সঞ্চালিত হয়, তবে ডাক্তার এটি প্রক্রিয়ার পরেই খুঁজে পাবেন। যাইহোক, যদি একটি বায়োপসি (একটি টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ) সঞ্চালিত হয়, তবে পরীক্ষার পরীক্ষাগার থেকে মাত্র কয়েক দিন পরে ফলাফল পাওয়া যাবে। রোগ নির্নয় করার পর ডাক্তার যথাযথ চিকিৎসার ব্যাবস্থা নিতে পারেন।
সংগৃহীত
Leave a Reply